‘কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ময়দান সাদপন্থিমুক্ত রাখতে হবে’
চব্বিশ ঘণ্টায় ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী মতলববাজদের কোনো ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শে কান দেওয়া যাবে না। কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান সব সময়ের জন্যই সাদপন্থিমুক্ত রাখতে হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার ‘জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ’র সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে মাওলানা মো. ফজলুল করীম কাসেমী বলেন, ৯০ শতাংশ ওলামাপন্থি তাবলিগের সাথী তথা উলামায়ে কেরামদের পরামর্শে ওই দুটি স্থান শুরায়ী নেজামে চলনেওয়ালাদের জিম্মায় ছেড়ে দিতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ নভেম্বরের মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্রেও সেটিই বলা হয়েছিল। অন্যথা হলে ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ঢাকা অচল হয়ে যাওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে। আমরা দেশবাসীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখি না।
‘দাওয়াত ও তাবলিগ হেফাজতের লক্ষ্যে’ আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা সানাউল্লাহ প্রমুখ।
মাওলানা কাসেমী বলেন, সাদপন্থিদের ‘মূলধারা’ বলতে পৃথিবীতে কোনো ধারা নেই। তাবলিগের এ মেহনতের কাজ ওলামায়ে দেওবন্দের সূর্যসন্তান হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) শুরু করেছেন। এখনো হাক্কানি ওলামায়ে কেরামরা এই মকবুল কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তারাই দাওয়াত ও তাবলিগের মূলধারা, এর বাইরে কোনো ধারা নেই। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে কোনো বৈষম্যের স্থান নেই, কারণ ‘বৈষম্য’ শব্দের অর্থ হলো সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া। যারা দীনের, কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যাকারী, নবি-রাসুল (সা.) ও সাহাবাদের (রা.) বিদ্বেষী-দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে তাদের কোনো অংশ থাকার সুযোগ নেই। এক কথায় ওলামাবিদ্বেষী, টঙ্গীতে মানুষ হত্যাকারী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সাদপন্থিদের কাকরাইল ও টঙ্গীতে কোনো অধিকার নেই, থাকার প্রশ্নই আসে না। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের একটাই পক্ষ, তা হলো-হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর কর্মপদ্ধতি অনুসরণকারী ওলামায়ে হক্কানির পক্ষ।
মাওলানা কাসেমী আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা দুর্নীতিবাজদের মদদ দিয়েছে, ভোটারবিহীন নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলীয় কর্মী হিসাবে মাঠে কাজ করেছে, তারা আজ ষাটের বেশি ওলামাসহ দুই হাজারের বেশি শহিদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের আশপাশে ভিড় করছে। তাদের ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শে কান দেওয়া যাবে না। নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
সাদপন্থিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সমাধানের পথ একটি খোলা আছে। তওবা করুন আপনাদের আমিরকে তওবা করান, দীনের সহিহ পথে ফিরে আসুন। সংঘাত নয়, শান্তির পথে চলতে শিখুন।
আজ পালটা সংবাদ সম্মেলন : টঙ্গী শিল্পাঞ্চল (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, আজ পালটা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন সাদপন্থিরা। মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম যুগান্তরকে বলেন, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে হক্কানি উলামা-মাশায়েখ পরিষদের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও আয়োজক পরিষদের সমন্বয়ক মুফতি আজিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে সেখানে উপস্থিত থাকতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ সায়েম আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা তাবলিগের নাম ব্যবহার করে ওলামা-মাশায়েখের ব্যানারে (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা করছেন, সরকারকে হুমকি দিয়েছেন। তাবলিগ জামাত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা দেশের শান্তিপ্রিয় আলেম-উলামা ও সাধারণ মুসল্লিরা বরদাশত করবেন না। দেশকে অচল করে দেওয়ার হুমকি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা জরুরি।