Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’র হুঁশিয়ারি রংপুরের ছাত্র-জনতার

সারজিস আখতারসহ ১০ জনকে উপদেষ্টা করার দাবি

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’র হুঁশিয়ারি রংপুরের ছাত্র-জনতার

ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ও সারজিস আলমসহ উত্তরবঙ্গ থেকে অন্তত ১০ জনকে উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ছাত্র-জনতা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে রংপুর বিভাগ থেকে উপদেষ্টা না রাখাকে ‘চরম বৈষম্য’ দাবি করে তারা বলেছেন, আজ মঙ্গলবার সরকারি অফিস চলাকালীনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা না পেলে রংপুরকে অচল করতে ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’ কর্মসূচিসহ বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশের সঙ্গে রংপুর বিভাগের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। 

সোমবার বিকালে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এ হুঁশিয়ারি দেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন-ইমরান আহমেদ, ইমতিয়াজ ইমতি, সাজ্জাদ হোসেন, ডা. জামিল, নাহিদ হাসান খন্দকার, হামীম মুনতাসীর অহন, মুহম্মদ রাজিমুজ্জামান হৃদয়, ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ।

তারা বলেন, আজ মঙ্গলবার অফিস চলাকালীন আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে রংপুরের প্রতি যে অবহেলা ও বৈষম্য করা হচ্ছে, তা দূরীকরণে সুস্পষ্ট ইতিবাচক বার্তা চাই। অন্যথায় বুধবার বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। অধিকার আদায়ের লড়াই-সংগ্রামে এবার রংপুরের মানুষ আর নীরব থাকবে না বলেও জানান।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি আর কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস রংপুর সফরে এসে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতা এখন আজ ভিন্ন। দফায় দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও আবু সাঈদের অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত একজনও নেই। অথচ জুলাই বিপ্লবের টার্নিং পয়েন্টে ছিল রংপুর থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলন-সংগ্রাম। 

তারা বলেন, শহিদ আবু সাঈদের রক্তে রঞ্জিত উত্তরবঙ্গের প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। এই অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করে, জীবন দেওয়ার পরও কেন বৈষম্যের শিকার? শুধু কি চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-ঢাকাসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়, রংপুর-রাজশাহী বিভাগ কেন বঞ্চিত, কেন উপদেষ্টা রাখা হচ্ছে না? কাদের ইশারায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে পরিচিত ও বিতর্কিতরা উপদেষ্টা হচ্ছেন। আর কারাই বা রংপুরকে পেছনে ফেলে রাখার ষড়যন্ত্র করছে, তা উত্তরবঙ্গের মানুষ জানতে চায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় : অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করাকে ‘চরম বৈষম্য ও অবহেলা’ হিসাবে দেখছেন সাধারণ মানুষজনসহ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। অনেকেই রংপুরকে অবহেলার ক্ষোভে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। করেছেন নানা মন্তব্য। রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ লিখেছেন, ‘আবু সাঈদের চেতনায় যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো সেই রংপুর থেকে একজন উপদেষ্টা দেওয়ার কথা কেউ চিন্তা করলেন না? রংপুর থেকে উপদেষ্টার দাবিতে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিতে চাই।’

জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মোহাম্মদ আরিফ আলী লিখেছেন, ‘লাশ চাই উত্তরের! সব শাসক হবে দক্ষিণের?’ একই রকম ক্ষোভ ঝেড়ে রংপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক সেরাফুল ইসলাম হিমেল লিখেছেন, ‘যে রংপুর থেকে দেশের পরিবর্তন হলো। সেখান থেকে কাউকে নিলেন না উপদেষ্টা পরিষদে, আপনাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ।’

নতুন উপদেষ্টাদের তালিকায় রংপুর বিভাগের কাউকে না রাখায় হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুকে সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগ লিখেছেন, ‘সবার আগে বুক পেতে জীবন দিল রংপুর বিভাগের আবু সাঈদ। বিনিময়ে পেয়েছে পিয়ন। আর চট্টগ্রাম বিভাগ পেল ১৩ জন উপদেষ্টা। আলহামদুলিল্লাহ।’

সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম হৃদয় লিখেছে, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহিদ শংকু সমজদার ও ২০২৪ এ আবু সাঈদ। ইতিহাস বলে আন্দোলনে সম্মুখভাগে থাকা উত্তরের জনপদ সেই রংপুর সবসময় বৈষম্যের শিকার।’

আজিজ আল জামান রুহিত নামে একজন লিখেছেন, ‘শুধু ১টা বিভাগ থেকে ১৩ জন উপদেষ্টা! অথচ উত্তরবঙ্গের রংপুর, রাজশাহী বিভাগের ১৬টা জেলা থেকে কোনো উপদেষ্টা নেই! তার ওপর ফ্যাসিস্ট তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছে।’ 

রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আতিকুজ্জামান আতিক লিখেছেন, ‘উত্তরাঞ্চলে নির্ভেজাল স্বৈরাচারের দালাল নাই, তাই উপদেষ্টা বানাতে পারছে না কাউকে। উত্তরাঞ্চল যেন একখণ্ড পূর্ব পাকিস্তান।’

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খাঁন সজীব লিখেছেন, ‘আবু সাঈদের রংপুর থেকে একজন উপদেষ্টাও নেই। অথচ আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা নেই, এমন মানুষও হয়ে গেছে উপদেষ্টা।’


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম