সাত বিমানবন্দর উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন
বেবিচকের হাবিবকে দুদকে তলব
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দুর্নীতির মামলার তদন্ত ও অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায় বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। তাকে ১৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান স্বাক্ষতির এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপেক্ষর (বেবিচক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে হাবিবুর রহমানের বক্তব্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য তাকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
বেবিচকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জহিরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ই/এম) মো. জাকারিয়া হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
এর আগে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে উল্লিখিত ব্যক্তিসহ বেবিচকের বেশকিছু কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। ২৪ অক্টোবর দুদক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠির জবাব দিয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রায় পুরো সময় বেবিচকের দাপুটে কর্মকর্তা ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজে ঠিকাদারদের ফাইল আটকে রেখে তিনি হাতিয়ে নিতেন অর্থ। অনিয়মের কারণে একাধিকবার শাস্তিমূলক বদলিও হয়েছেন। দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে তাকে ফ্লাইট সেফটিতে বদলি করা হলেও তার প্রভাব কমেনি এখনো।
জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নকাজে প্রকল্প (পিডি) পরিচালক থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দরপত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পায় মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। পরে তাকে পিডি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সিভিল সার্কেল-১-এ থাকাকালে অযোগ্যতা, দুর্নীতি ও খামখেয়ালির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদক থেকে বেবিচকের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব না দিতে বলা হয় হাবিবুর রহমানকে। কিন্তু তারপরও নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পাওয়াই শুধু নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কয়েকটি হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের দায়িত্ব পান তিনি।
দুদক সূত্র জানায়, বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বিমানবন্দর উন্নয়নকাজের দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাবিব। তার মধ্যে রয়েছে খানজাহান আলী বিমানবন্দর উন্নয়ন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন, ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণ এবং প্যারালাল টক্সিওয়ে নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও বিদ্যমান টার্মিনালের সম্প্রসারণ নবরূপায়ণ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও রানওয়ে সম্প্রসারণ।
তার অদক্ষতায় সিলেট বিমান বন্দরের উন্নয়নকাজে নকশায় ত্রুটি ছিল বলেও জানা গেছে।
এছাড়া সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ছয়টি স্বর্ণবার নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন। স্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণের বার নিয়ে বাইরে পাচারের সময় আটক হওয়া এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষে তার বেতন স্কেল শুধু কমানো হয়েছে। দুদকে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ চলমান রয়েছে।