বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়েছে আদানি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বকেয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার আদায়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল এবার নতুন করে আরও ১০ শতাংশ কমিয়েছে তারা। বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড অপারেটর ও পিডিবি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি করা আদানি পাওয়ার আগস্টের শুরুতে সরবরাহ ১৪০০-১৫০০ মেগাওয়াট থেকে কমিয়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের তথ্য অনুসারে এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন কর্মকর্তার মতে বৃহস্পতিবার সরবরাহ আরও কমিয়ে প্রায় ৫২০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধ করছি এবং কেউ সরবরাহ বন্ধ করলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের জিম্মি করতে দেব না।
বিপিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বকেয়া পরিশোধ ত্বরান্বিত করা এবং ৭ নভেম্বর আদানি বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা তুলে নিলেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমছে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ আদানির জন্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খুলেছে এবং অর্থ পরিশোধ ত্বরান্বিত করেছে। আদানি পাওয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস এবং ঢাকার পেমেন্টের বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। আদানি পাওয়ারের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ থেকে চাহিদার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানো হয়েছে।
এদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেছেন, আদানির বিদ্যুৎ বিল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আদানি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিল দিয়েছে ৮০ কোটি ডলারের। কিন্তু পিডিবি তাদের বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে তারা বাংলাদেশকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে তাতে তাদের বিল হওয়ার কথা ৫৪.৮৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিল নিয়ে প্রশ্ন আছে। জুলাই-আগস্টে আরও ৫ কোটি ডলার বেড়েছে। পিডিবি ইতোমধ্যে তাদের এই অতিরিক্ত বিল নিয়ে প্রশ্ন উঠিয়ে আদানিকে চিঠি দিয়েছে। যদিও আদানির পক্ষ থেকে এ অতিরিক্ত বিল নিয়ে কোনো বক্তব্য পায়নি পিডিবি। তবে আদানি পাওয়ার মৌখিকভাবে জানিয়েছে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের বিলও বেড়ে গেছে। সে কারণে তাদের বিল বেশি হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অতিরিক্ত বিলের ইস্যুটি এখনো নিরসন না হলেও বাংলাদেশ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি পাওয়ারকে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার পরিশোধে নতুন ঋণপত্র (এলসি) ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদানি পাওয়ারকে এই নিয়ে তৃতীয় এলসি ইস্যু করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এই এলসি ইস্যু করেছে; এই এলসির ভারতীয় পক্ষ হচ্ছে আইসিআইসিআই ব্যাংক। আগের এলসিগুলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আদানি পাওয়ার বিপিডিবির কাছে অতিরিক্ত ২৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে। এই অর্থ না দিলে কোম্পানিটি বন্ধ করে দেওয়া প্রথম ৮০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি ফের চালু করবে না বলে জানিয়েছে এবং এক সপ্তাহ ধরে তাদের ওই ইউনিটটি বন্ধ হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিদ্যুতের প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করে।