সংবাদ সম্মেলনে মুফতি আজিম উদ্দিন
ইজতেমায় মাওলানা সাদের উপস্থিতি নিশ্চিতের দাবি
ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করার আহ্বান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব ইজতেমার তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার দাওয়াত ও তাবলিগের উলামায়ে কেরাম এবং সাধারণ সাথি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এ সময় লিখিত বক্তৃতা করেন কাকরাইল মসজিদের খতিব মুফতি আজিম উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুয়াজ বিন নূর, মুফতি শফিউল্লাহ প্রমুখ।
মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ থেকে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় সাদপন্থিদের প্রতিহতের ঘোষণার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাভার ইসলামিয়া মাদ্রাসার সভাপতি মুফতি জিয়া বিন কাশেম বলেন, আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কোনো ধরনের মতভেদ থাকলে সেটা বসে সমাধান করতে চাই। ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর করে বিশ্ব ইজতেমায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি বলেন, তাবলিগের মাওলানা জুবায়েরপন্থিদের কোনো আমির বর্তমানে নেই। তাই তাদেরকে বিশ্ব আমির মাওলানা সাদের নেতৃত্বে ইজতেমায় অংশ নেওয়া উচিত। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় কাকরাইল মসজিদের খতিব মুফতি আজিম উদ্দিন বলেন, দাওয়াতে তাবলিগ বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সংগঠন। এ দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখো-কোটি মানুষ ইসলামের পথে এসেছেন এবং হেদায়েত লাভ করেছেন। বিশ্বব্যাপী এ দাওয়াতি সংগঠনের বার্ষিক সম্মেলন বা বিশ্ব ইজতেমা ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সুনামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সরকার ও প্রশাসনের ব্যাপক সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তথাকথিত ‘জুবায়েরপন্থি’ তাবলিগের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ দেশের কতিপয় ওলামায়ে কেরামকে বিভ্রান্ত করে এবং মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে। ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের আয়োজিত প্রোগ্রাম থেকে অসংখ্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অথচ আমরা ৩ নভেম্বর জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তাবলিগ জামাতের সাথিরা দলমতনির্বিশেষে সব ওলামায়ে কেরামের হিতাকাঙ্ক্ষী। তিনি বলেন, সমাবেশে আসা ৯০ শতাংশ ব্যক্তি দাওয়াত ও তাবলিগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এতৎসত্ত্বেও তাবলিগের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগবাড়িয়ে কথা বলা মানে গায়ে পড়ে ঝগড়া করা। এই ৯০ শতাংশের মধ্যে অধিকাংশই অবুঝ, মাদ্রাসাছাত্র।
তিনি বলেন, বিগত ৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের সমাবেশে দারুল উলুম দেওবন্দের মুখপাত্র মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, তাবলিগের উভয় পক্ষই হক। দারুল উলুম দেওবন্দ উভয় পক্ষের কাছে যায় এবং উভয় পক্ষই দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে আসে। পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীও কয়েকদিন আগে বলেছেন, তাবলিগের উভয় পক্ষই আমাদের ভাই। ঠিক যেমন হানাফি ও শাফেয়ি মাজহাব। যে যার সঙ্গে ইচ্ছা করে, সে তার সঙ্গেই মেহনত করতে পারে। আগেও তিনি দুইবার বাংলাদেশের আলেমদের সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে সমাধানমূলক প্রস্তাব পেশ করছি। তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী (দা. বা.) ও নিজামুদ্দীন মারকাজের অনুসারী তাবলিগ জামাত সম্পর্কে যে অসত্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়ে ৭টি শর্তের ভিত্তিতে ওপেন চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব দিচ্ছি। তার মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের মাওলানা আরশাদ মাদানী (দা. বা.) ও পাকিস্তানের শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীসহ (দা. বা.) ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরা বিচারক হিসাবে, সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, উভয় পক্ষের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হবে এবং সেখানে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটিই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা সব সময় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের পক্ষে। আমরা ঘরোয়া বৈঠকে বসে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই। কিন্তু আপনারা লক্ষ করেছেন, আগের সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে জুবায়েরপন্থিরা অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠক করে টানা ৭ বছর প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ করে নিয়েছে। অথচ তারা বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠককে উপেক্ষা করে রাজপথে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে-আগের সরকারের সঙ্গে বসার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি না থাকলেও এই বৈষম্যবিরোধী সরকারের সঙ্গে বসতে আপত্তি কেন?
এ সময় তারা বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান।