শ্বেতপত্র কমিটির কাছে সচিবদের অভিযোগ
প্রশাসন ছিল রাজনীতির কাছে জিম্মি
সুবিধাভোগী আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিকদের ত্রিমুখী সমন্বয়ের কারণে উন্নয়ন প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি-ড. দেবপ্রিয় * ১৫ বছর উন্নয়ন প্রকল্পে রীতিমতো লুণ্ঠন চলেছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি অবস্থায় ছিল তাই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিবরা। ওই সময় কেউ কেউ এই অবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু কাজ করেছিলেন। তবে তারা পেশাগতভাবে সমস্যায় ছিলেন। এক্ষেত্রে পেশাভিত্তিক সমিতিগুলোও জিম্মি ছিল রাজনৈতিকভাবেই। ফলে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অতি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কারণে দলগতভাববে বা সমিতিগতভাবেও কিছু করতে পারেননি। রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তারা এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কিছু সুবিধাভোগী আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের ত্রিমুখী সমন্বয়ের কারণে উন্নয়ন প্রশাসন ঠিবকমতো কাজ করতে পারেনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ১২ জন সদস্যই সরাসরি ও অনলাইনে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এতে ৮৫ জন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেন। এর মধ্যে ৩২ জনই সিনিয়র সচিব ও সচিব ছিলেন। ব্রিফিংয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ফেরদৌস আরা বেগম, ড. সেলিম রায়হান, প্রফেসর তসলিম সিদ্দীকি এবং ড. এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, গত ১৫ বছরে উন্নয়ন প্রকল্পে লুণ্ঠন প্রক্রিয়া চলছিল। ওই সময় আমলারা রাজনীতি এবং তাদের সিনিয়রদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছেন। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিকমতো করা হতো না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। সচিবরা জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেখানো হয় যেসব প্রকল্প টেকসই হবে, পরে দেখা যায় সেগুলো টেকসই হয়নি। অনেক সময় জমি অধিগ্রহণ করা হবে বলে আগেই জমি কিনে তিনগুণ দাম নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমলারা জানিয়েছেন পেশাগতভাবে আমলাতন্ত্রকে ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। রাজনীতিকীকরণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কর আহরণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত করা এবং আগামীতে তাদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সচিবরা আরও জানান, পেশাদারি উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। উন্নয়ন প্রশাসনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে স্বাধীনতা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সঠিকভাবে কাজ করতে আমলাদের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে সমন্বয়, সদিচ্ছা এবং সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পুরোপুরি শেষ না করেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আইএমইডির সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এরপরও যেসব প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রে আইএমইডির সমক্ষমতার ঘাটতি যেমন আছে, তেমনি আইএমইডিকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হলে ক্ষমতায়নও করতে হবে। সেই সঙ্গে আইএমইডিকে সুরক্ষাও দিতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইএমইডি অনেক সময় খুব ভালো কিছু প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেখানে অনেক অনিয়মের তথ্যও তুলে আনা হয়। কিন্তু এজন্য তাদের সরকারি রোষানলে পড়তে হয়েছিল। অনেক সময় আমলাদের মধ্যেও সিনিয়র আমলারা জুনিয়র আমলাদের চাপ দিতেন। অনেক আমলাদের ভেতরে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছিল। এখন নতুন সরকারের সময় নানা সংস্কার হচ্ছে। ফলে মূল কাঠামো শক্তিশালী হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের রাজনীতি ঠিক না থাকলে আমলাতন্ত্র ঠিক হবে না। রাজনীতি ঠিক করা হলে আমলাতন্ত্র ঠিক হবে।