কম দামে শাকসবজি বিক্রি
ডেমরায় ছাত্র তরুণের দোকানে বাড়ছে আগ্রহ
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
রাজধানী ডেমরায় ন্যায্যমূল্যের শাকসবজির দোকানে ক্রেতাদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় বাজারগুলোর তুলনায় এখানে পণ্যের দাম কম বলে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। কেজিপ্রতি ১৫-৩৫ টাকা কম দামে তারা কিনতে পারছেন। প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে দোকানিরা বলছেন-ভালো মান ও টাটকা সবজি কম দামে বিক্রি সম্ভব নয়। এজন্য পাইকারি বাজারের সিন্ডিকেট অবশ্যই ভাঙতে হবে।
তারা বলেন, ব্যবসা মানে জুলুম নয়, বরং সেবাই ব্যবসা। ছাত্র-তরুণরা তো তাদের মূল কাজ ফেলে সারা বছর সবজি বিক্রি করতে পারবে না। চাল, ডাল, তেল ও লবণসহ সব জিনিসপত্রের বাজারেও ঊর্ধ্বগতি চলছে। এসবের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সরকারিভাবে শৃঙ্খলা ও বেচাকেনার সুব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই সবার আকাঙ্ক্ষা সফল হবে।
সবজি বিক্রেতাদের অভিমত-সেবামূলক চিন্তাধারা নিয়ে ছাত্ররা এখন যে কাজ করছেন তাতে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক থেকে সবজি ঢাকায় এনে তারা যদি বিক্রি করতে পারত তাহলে সবজির মান আরও ভালো হতো। তারা যেসব পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে এলাকায় বিক্রি করে, আমরাও সেখান থেকে সবজি এনে বাজারে বিক্রি করি। এক্ষেত্রে দাম অনুযায়ী মানের বিষয়টি সামনে আসে। তাই এমন মহৎ উদ্যোগ সফল করতে অবশ্যই পাইকারি বাজারের মূল সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে।
এ বিষয়ে সারুলিয়া বাজারের রিপন, সামসুল ও মালেকসহ একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, তরুণদের উদ্দেশ্য সফল করতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি পাইকারি বাজারগুলোতে ছাত্র-তরুণদের মনিটরিং অব্যাহত থাকা উচিত। তাহলে বাজারে ন্যায্য দামে সব পণ্য বিক্রি শুরু হবে। কোনাপাড়া বাজারের আলমাস, ইব্রাহিম, মিজানুর রহমানসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, শুধু সবজি বিক্রি করে তো সংসারের খাওয়া-দাওয়া চলবে না। নতুন করে চালের দাম বেড়েছে। এগুলো এখন বড় ফ্যাক্টর। তেল, লবণ, চাল, ডাল, মাংস, চিনি, আটা-ময়দা, মসলা ও ঘিসহ সব পণ্যের দামে আগুন।
এদিকে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে শাকসবজি পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ডেমরার হাজীনগর ও কোনাপাড়া শাহজালাল, বড়ভাঙ্গা, আমতলাসহ অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু এলাকায় ছাত্র ও সামাজিক সংগঠনগুলো এ কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আগে সামাজিক সংগঠন ফোরাম এসডিএ, খোঁজ ফাউন্ডেশন ও ফেসবুক গ্রুপের আয়োজনে গত কয়েকদিন ধরে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম সবার নজর কেড়েছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রসহ স্থানীয় তরুণরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে ব্যানার টাঙিয়ে তাদের ন্যায্যমূল্যের বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডেমরার অভ্যন্তরীণ জনবহুল এলাকাগুলোতে বেশ কিছু সংগঠন ও ছাত্ররা ভাসমান দোকানে মূল্য তালিকা লাগিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। একই চিত্র চোখে পড়ে ডেমরার বাইরের এলাকাগুলোতেও। এখানে ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, বেগুন ৬০, কহি (চিচিঙ্গা) ৫০, জলপাই ৪০, লাউ প্রতিটি ২৫, ঝালি কুমড়া প্রতিটি ৪৫, ফুলকপি ২৫, পটোল ৪০, লেবুর হালি ১০ এবং কচুর লতি ৬০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে, যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে প্রতিটি আইটেম ১৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কম। ছাত্র-তরুণদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। ক্রেতা সাধারণও কম মূল্যে বাজার করতে পেরে খুব খুশি। এ কার্যক্রম চালু রাখার দাবি জানান ক্রেতারা।
মধ্য হাজীনগরের বাসিন্দা জাহানারা খাতুন বলেন, বাজারের চেয়ে সব সবজির দাম ন্যায্যমূল্যের দোকানে কম। আন্দোলনের পর কয়েক দিন সিন্ডিকেট না থাকায় বাজার সহনীয় থাকলেও এখন আবার সব কিছুর দাম বেশি। এ কার্যক্রম চলমান রাখলে জিনিসপত্রের দাম অবশ্যই কমে যাবে। তরুণরাই আমাদের দেশটাকে বড় পরিবর্তন করতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তাদের পক্ষে সিয়াম ও রনি বলেন, আমরা প্রতিদিন কৃষক পর্যায় থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ীর আড়ত থেকেও পণ্য সংগ্রহ করি। বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন ভাসমান দোকানে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করি। আমরা ১০-১২ জন ছাত্র-তরুণ প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা পরিশ্রম করছি। আমরা সাধারণ মানুষকে দেখাতে চাই আসলে বাজারে এসব তরিতরকারির মূল্য এত বেশি না।