বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
আগামী বছর পণ্যের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামবে
বিশ্ববাজারে গম, সয়াবিন তেল, চিনি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে কমেনি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যেই পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। আগামী বছর বৈশ্বিকভাবে গড়ে পণ্যের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে আসবে। জ্বালানি তেলের দাম বেশি মাত্রায় কমার পূর্বাভাস থেকে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার কারণে তেলের দাম যেভাবে কমার প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেভাবে হয়তো কমবে না। এতে পণ্যের দাম কিছুটা সীমিত হারে কমবে। এ কারণে করোনা মহামারির আগের পাঁচ বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেশি থাকবে।
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক, অক্টোবর ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হয়নি। তবে বাংলাদেশের চায়ের উৎপাদন ৮ শতাংশ কমে গেছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এখন পর্যন্ত অনেক পণ্যের দাম কমেছে।
সূত্র জানায়, বৈশ্বিকভাবে অনেক পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে কোনো পণ্যের দামই কমেনি। উল্টো আরও বেড়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, ভুট্টার দাম ২৬ শতাংশ, সয়াবিন তেলের দাম ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের দাম সাড়ে ৮ শতাংশ, চিনির দাম ১২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এসব পণ্যের দাম কমার কারণে আমদানি খরচ কমেছে। ফলে দেশের বাজারেও দাম কমার কথা থাকলেও কমেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে যাবে। তেলের দাম বেশি মাত্রায় কমার কারণে এমনটি হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সংঘাতের কারণে তেলের দাম যতটুকু কমবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, সে হারে কমতে নাও পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মন্দা থেকে অর্থনীতি ক্রমেই পুনরুদ্ধার হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে তেলের চাহিদা বাড়ছে বেশি। তবে চীনসহ অনেক দেশে এর চাহিদা কমে যাচ্ছে। কারণ ওইসব দেশ গণপরিবহণসহ অনেক খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যে কারণে সেবা খাতে তেলের চাহিদা কমছে। দাম কমার এটিও একটি অন্যতম কারণ। এছাড়া তেলের বাজার এখন এককভাবে আর ওপেক বা তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই।
ওপেক সদস্য নয় এমন অনেক দেশ এখন তেল রপ্তানি করছে।
২০২৪ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরে বৈশ্বিকভাবে খাদ্যের দাম কমবে ৯ শতাংশ। আগামী বছর আরও ৪ শতাংশ কমবে। তবে এই সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড় মূল্য স্তরের প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি থাকবে। এসব পণ্যের দাম ২০২৫ সালে ৬ শতাংশ ও ২০২৬ সালে আরও ২ শতাংশ কমবে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম কমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য মূল্যস্ফীতির হার আরও কমানো সহজ হবে।
তবে প্রতিবেদনে এ মর্মে আশঙ্কাও ব্যক্ত করা হয়েছে, মধ্যপ্রাাচ্যে সংঘাত বেড়ে গেলে সরবরাহ ব্যাহত হয়ে খাদ্য ও জ্বালানি উপকরণের দাম বেড়ে যেতে পারে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে আংশিক পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের সর্বনিম্ন প্রতি ব্যারেল ৭৩ ডলারে নামতে পারে। চলতি বছরে তা প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলার থেকে নেমে আসতে পারে। ফলে বৈশ্বিক ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি জ্বালানি তেলের কারণ সৃষ্ট বড় একটি আঘাত থেকে রক্ষা পাবে। এতে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমবে, মুদ্রানীতিকে সংকোচনমুখী ধারা থেকে পরিবর্তন করে কর্মসংস্থানমুখী ধারায় ফিরিয়ে নিতে পারবে।