অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে পরোয়ানা
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জে স্থগিত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতের বিচারক ২০০৬ সালের একটি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে আদালতে হাজিরের পরোয়ানা জারি করেছিল। বাংলাদেশের কাছ থেকে ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার জরিমানা আদায় করার বিষয়ে তাদের জবানবন্দি নিতে এ আপিল করেছিল স্মিথ কোজেনারেশন। তবে বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করায় শুক্রবার সেই পরোয়ানা স্থগিত করা হয়েছে।
শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
রাষ্ট্রদূত পোস্টে লিখেছেন, ‘১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে একটি চুক্তি বাতিলের দায়ে স্মিথ কোজেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একটি মামলা করে। ১৯৯৭ সালে স্মিথ কোজেনারেশন তৎকালীন বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতি প্রদান করেছিল সরকার।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট কোর্ট অনেকটা এখতিয়ারবহির্ভূত একটি রায় প্রদান করে, যা আজ শুক্রবার আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়। যদিও বিষয়টির সাময়িক অবসান ঘটেছে। তবে লুটেরা সরকারের দায় রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার নিতে পারে না। বাংলাদেশ সরকারের সে সময়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে এবং বিষয়টি বর্তমান সরকারের নজরে না এনে ধামাচাপাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’ এর আগে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানায় আমেরিকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ল৩৬০। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ইউএস ডিস্ট্রিক্ট বিচারক কার্ল জে নিকোলস স্মিথ মার্কিন মার্শাল সার্ভিসকে ওই দুই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
দুই যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া চুক্তি বাতিলে একটি মার্কিন বিদ্যুৎ কোম্পানির মামলায় তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল বলে আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশ থেকে মোট ৩১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের সালিশি ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করছে। বিচারক কার্ল জে. নিকোলস ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন, যেন সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুরকে আদালতে হাজির করার জন্য আটক করা হয়। এই নির্দেশের পরই বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করে।
বাংলাদেশ সরকার ডিসি সার্কিট আদালতকে জানায়, বিচারক নিকোলসের এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এখতিয়ার নেই। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কূটনীতিক। তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা হতে পারে না। সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দায়মুক্তি দেওয়া আছে।
মার্কিন বিদ্যুৎ কোম্পানি স্মিথ কোজেনারেশন গত বুধবার আদালত অবমাননার আবেদন করে। তাদের দাবি, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বুধবার হাজির হওয়ার নির্দেশ অমান্য করেছেন। স্মিথ কোজেনারেশন আদালতকে জানায়, এই নির্দেশ না পেলে বাংলাদেশ সরকার আদালতের কর্তৃত্বকে অবজ্ঞা করতে থাকবে এবং সাক্ষ্য দেওয়ার নোটিশগুলোর কোনো জবাব দেবে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ২১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন যান অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২৬ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত এই সভা চলার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সফরকারী দলে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সাতজন সরকারি কর্মকর্তা।