Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কৃষিতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার প্রকল্প

পানি সেচ দেখতে বিদেশ সফরের পাঁয়তারা

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পানি সেচ দেখতে বিদেশ সফরের পাঁয়তারা

অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফরের পাঁয়তারা চালানো হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত একটি প্রকল্পে। এর আওতায় বিদেশ সফরে যেতে চেয়েছিলেন কর্মকর্তারা। এ খাতে ব্যয়ও ধরা হয় ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু বাদ সাধে পরিকল্পনা কমিশন।

ব্যাপক আপত্তির মুখে ‘সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্প থেকে বাদ যাচ্ছে বিদেশ প্রশিক্ষণের প্রস্তাব। ফলে অপচয়ের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে এই অর্থ। পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন-এ ধরনের একটি সাধারণ প্রকল্পে তারা কী কাজ শিখতে যাবেন। যদি বলা হয়, সেচকাজ শিখতে যাবেন, তাহলে তা হবে হাস্যসকর ও অযৌক্তিক প্রস্তাব।

এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে খরচের কথা। সব প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।

প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয়বার পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। সেখানে বিদেশ সফরের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে কি না এবং অন্যান্য খাতের ব্যয় আরও কমানো যায় কি না-সেসব খতিয়ে দেখা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে নানা ধরনের অনিয়ম থাকে। যেমন: বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে ধরা হয়। অহেতুক অনেক ব্যয় যুক্ত করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেসব অপরাধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। যারা এমন অপচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের কিছুই করা হয় না। সেখানে বিদেশ সফরের মতো প্রস্তাবের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কতটুকু আশা করা যায়? তবে অহেতুক অর্থ ব্যয়ের যেসব প্রস্তাব আসে, সেগুলোর বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তা যত অল্প ব্যয়ের প্রস্তাবই হোক না কেন। কারণ, এক টাকাও জনগণের কর থেকে আসে। তাই জনগণের করের প্রতিটি টাকার হিসাব থাকা দরকার।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, এর আগে ৮ জুলাই প্রকল্পটি নিয়ে প্রথম পিইসি সভা করা হয়। সেখানে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা স্টাডি ট্যুরের নামে বরাদ্দ ধরা ছিল। কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করা হয় সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ খাতে অর্থ ব্যয়ে আপত্তি জানানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক শিক্ষা সফরের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবার পিইসি সভা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির গুরুত্ব আছে। কেননা সিলেট অঞ্চলের অনেকে প্রবাসে জীবনযাপন করেন। এ কারণে অনেক জমি অনাবাদি থাকে। এ অবস্থায় সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে উৎপাদন বাড়ানো যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রস্তাব বাদ দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু যারা এ সংকটময় সময়ে এমন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর এসব কারণে বারবার এমন ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব আসছে পরিকল্পনা কমিশনে। তারা আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন থাকলেও এ প্রকল্পে কেন বিদেশে যেতে হবে, সেটি বড় প্রশ্ন। এগুলো শক্তভাবে ধরা দরকার।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় খাল, নালা এবং পাহাড়-ছড়া পুনঃখনন বা সংস্কার করা হবে। এছাড়া আধুনিক সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিজমির অপচয় রোধ এবং সেচ দক্ষতা বাড়ানো হবে। সিলেট বিভাগে মোট জমির পরিমাণ ১ কোটি ২৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩১ হেক্টর। যেখানে নিট সেচযোগ্য জমির পরিমাণ ৭ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ হেক্টর। বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৯ হাজার ৩১১ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আরও ২৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমি সেচের আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৭ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনসহ ৩১ লাখ ১২ হাজার ২৩৩ টন উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।

সূত্র জানায়, ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের প্রায় ১৭টি সুপারিশ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-প্রকল্পের উদ্দেশ্য থেকে হাওড় এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূরীকরণ অংশ এবং প্রকল্প থেকে একটি জিপ ও ৫টি পিকআপ কেনার সংস্থান বাদ দিতে হবে। একটি জিপ গাড়ি ভাড়াসহ এর আনুষঙ্গিক সব খরচ মিলে সাকুল্যে মাসিক ২ লাখ ২০ হাজার টাকা রাখা যাবে।

পাশাপাশি দুটি ডাবল কেবিন পিকআপ গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতিটির জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ধরে মোট মাসিক ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা রাখা যেতে পারে। প্রস্তাবিত প্রকল্প থেকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বাদ দিতে হবে। প্রকল্পে দুজন জুনিয়র ডিজাইন কনসালট্যান্টের পরিবর্তে একজন সিনিয়র ডিজাইন কনসালটেন্টের সংস্থান রাখা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় বজ নিরোধক যন্ত্র স্থাপনের প্রস্তাব বাদ দিতে হবে। এগুলো সুপারিশের প্রতিপালন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এরই মধ্যে ডিপিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু আওয়ামী সরকারের পতনের পর প্রস্তাবটি পাঠানো হয় পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে। তিনি অধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দিয়ে প্রস্তাব ফেরত দেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি সেক্টরে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় পিইসি সভা হচ্ছে। সভায় সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যয় কীভাবে কমানো যায় অথবা অপচয় হবে-এমন ব্যয় থাকলে সেগুলো বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম