ইসরাইলি হামলার লোমহর্ষক বর্ণনা
লেবানন থেকে ফিরলেন নারী শিশুসহ ৫৪ বাংলাদেশি
ইসরাইলের হামলায় বিপর্যস্ত লেবানন থেকে প্রথম দফায় ৫৪ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে ছয় শিশু রয়েছে। যাদের দুজনের জন্ম হয়েছে লেবাননে। সোমবার সন্ধ্যায় জেদ্দা থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তারা। আরও এক হাজার ৮০০ জন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন দেশে আসার। তাদের পর্যায়ক্রমে সরকারি খরচে দেশে আনা হবে। তাদের একজন নরসিংদীর মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি সাত বছর আগে লেবাননের বৈরুতে চাকরি নিয়ে চলে যান। পরে স্ত্রীকেও নিয়ে যান। গত বছরের নভেম্বরে সেখানে তার এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখেন মাহাদী। ফুটফুটে মাহাদীকে নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সোমবার হোসাইন ও তার স্ত্রী দেশে ফিরেছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোহাম্মদ হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, কোথাও আশ্রয় নিয়েও থাকার উপায় নেই। একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। বোমার শব্দে কেঁপে উঠছে মাটি, ধসে পড়ছে বিল্ডিং। এ অবস্থায় মানুষ এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ভয়ে মানুষ বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে।
লেবানন থেকে ফেরা আরেকজন পারভীন বেগম বলেন, আতঙ্কের মধ্যে আমরা ছিলাম। বাঁচব নাকি মারা যাব এর কোনো গ্যারান্টি ছিল না। যেখানে সেখানে বোমা মারা হচ্ছে। আমাদের বাঙালিদের কোনো আশ্রয় নেই। একটি মাঠে হাজার হাজার বাঙালি অবস্থান নিয়েছে। তাদের অনেকেই গোসল ছাড়া আছেন। খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। খাওয়া-দাওয়ার খুব সমস্যা হচ্ছে। হাজার হাজার বাঙালি সমুদ্রের পাড়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের টাকা-পয়সা নেই। তবে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মীরা সহযোগিতার চেষ্টা করছেন এসব মানুষকে। মুন্সীগঞ্জের ঊষা শেখ কাজের ভিসায় লেবাননে গিয়েছিলেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বৈরুতে ছিলাম। সেখানকার অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
সোমবার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫৪ জন ফেরার পর তাদের খোঁজ-খবর নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময় তিনি বলেন, আমি লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ যারা ফিরে আসছেন তারা দূতাবাসের প্রশংসা করেছেন। তারা সেখানে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত কাজ করছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, লেবাননে এক লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ হাজার দেশে আসতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। পর্যায়ক্রমে আমরা সরকারি খরচে তাদের নিয়ে আসব। আমরা দেখব ফিরে যারা আসছেন তাদের পুনর্বাসন করা যায় কিনা। লেবাননের পরিস্থিতি ঠিক হলে তারা আবার যাবেন। আমরা দেশে অথবা বিদেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করব। রেমিট্যান্সযোদ্ধা যারা দেশে আসছেন আমরা তাদের ভিআইপি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অচিরেই আমরা প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ তৈরি করছি, দুই সপ্তাহের মতো লাগবে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বপ্ন, প্রবাসীরা যেন ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পায়।
এর আগে রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু আগে লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংস্থা মিডল ইস্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রওনা হন ৫৪ বাংলাদেশি। এর আগে তাদেরকে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। তাদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী, ছয়জন বিভিন্ন বয়সি শিশু এবং দুজন কোলের শিশু রয়েছে। আসিফ নজরুল বলেন, লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে যত টাকা প্রয়োজন খরচ করা হবে। আইওএম-এর সহায়তায় আমরা সবাইকেই বিনা খরচে নিয়ে আসব।
এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক প্রমুখ।
এদিকে রোববার রাতে বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ৬৫ জনকে নিয়ে দ্বিতীয় ফ্লাইট বৈরুত হতে জেদ্দা হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবে। দূতাবাস জানায়, লেবাননে চলমান যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় দেশে যেতে দূতাবাস বরাবর আবেদন করেছেন তাদের দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।