Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আওয়ামী সরকারের কথিত উন্নয়ন

৪২৫ কোটির এক প্রকল্পেই নানা ক্ষেত্রে অপচয়

রাজধানীর সড়কে অটো সিগন্যাল অকার্যকর, চলন্ত সিঁড়িও নষ্ট। বিশ্বব্যাংকের ঋণের বোঝা এখন জনগণের ঘাড়ে

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৪২৫ কোটির এক প্রকল্পেই নানা ক্ষেত্রে অপচয়

উন্নয়নের নামে প্রকল্পে একের পর এক অপচয়ের ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী সরকারের শাসনামলে। তদন্তে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যও বেরিয়ে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অর্থাৎ যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এমন একটি প্রকল্পের নাম ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)’। এ প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। ৬ বছরের প্রকল্প শেষ হয়েছে ১১ বছরে। আবার ৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৮০০ কোটি টাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত ৪২৫ কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্পের ইতি টানা হয়।

আলোচ্য প্রকল্পটিতে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রকল্পটি জনস্বার্থে যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল, এর অনেক কিছুই বাস্তবে কাজে লাগেনি। প্রকল্পের মূল কাজের মধ্যে ছিল রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে অটো সিগন্যাল, সোলার সিস্টেম, ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ ও ফুটওভার ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন। আছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু রাস্তার উন্নয়নও। কিন্তু আইএমইডির তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে এসেছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। বেশির ভাগ প্রকল্পের আউটপুট মুখ থুবড়ে পড়েছে। নেই কোনো মনিটরিং ও জবাবদিহি। অথচ প্রকল্প নেওয়া হয় বিশ্বব্যাংকের ঋণে। অধিকাংশ অর্থ দিয়েছে সংস্থাটি। এখন এর সঙ্গে জড়িতদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও ঋণের ঘানি টানতে হচ্ছে জনগণকে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চার বছর পর প্রস্তাব মূল্যায়ন করে এসব তথ্য উদ্ঘাটন করে খোদ সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। কিন্তু এরপর আর কিছুই হয়নি। ২০১৯ সালে শেষ হওয়া প্রকল্পটি ছিল একটি আমব্রেলা প্রকল্পের অংশ। এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পের কোনো এক্সিট প্ল্যান ছিল না। ফলে বাস্তবায়ন-পরবর্তী সময়ে কীভাবে এর ব্যবস্থাপনা করা হবে, সেটা নিয়ে কেউ ভাবেনি। তাই এ অবস্থা হয়েছে। তবে এখনকার নতুন প্রকল্পগুলোয় এক্সিট প্ল্যানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন যে অবস্থা, এতে আমরা সুপারিশ দিই মন্ত্রণালয়গুলো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেটি জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে একটি ‘ন্যাশনাল ইভ্যালুয়েশন পলিসি’ তৈরি করে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে মাসখানেক আগে। সেটি অনুমোদন পেলে এর আওতায় ইভ্যালুয়েশন আইন ও বিধিমালা করা হবে। তাহলে আমরা যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অপচয়ের তথ্য তুলে আনব, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়বে।

সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় মূল প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৪৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫১ কোটি ৮৪ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৩৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু তিনবার সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮০২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে এটি শেষ করা হয় ২০১৯ সালের জুনে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে মোট খরচ হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ৬ কোটি ৮৩ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণের ৪১৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

২০২৩ সালের জুনে করা আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান-১ লিংক রোড ইন্টারসেকশন অটো কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেম চালু নেই এবং সৌরবিদ্যুৎ অকার্যকর। একই অবস্থা দেখা গেছে হাউজবিল্ডিং কলোনি ইন্টারসেকশন, ঝিগাতলা, সাতমসজিদ রোড (শংকর) ইন্টারসেকশন এবং বনানী রোড-১১নং ইন্টারসেকশনে। জসীমউদ্দীন রোড ইন্টারসেকশনে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় (ওই সময়) সেখানেও এটি চালু নেই। এখানেও সৌরবিদ্যুৎ অকার্যকর দেখা গেছে। এছাড়া গুলশান-২ রোডে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম চালু থাকলেও সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম অকার্যকর। ফুটওভারব্রিজের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, শাহজাদপুর ফুটওভারব্রিজ অবৈধ হকারদের দখলে থাকায় জনগণের চলাচলে সমস্যা হয়। এছাড়া সিঁড়ির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠানামা করতে অসুবিধা হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বনানী-কাকলী, শ্যামলী, বসুন্ধরা শপিংমল, সোবাহানবাগ মসজিদ, নর্দা-বারিধারা বাসস্ট্যান্ড এবং উত্তর বাড্ডা বাজার ফুটওভারব্রিজে। এছাড়া পীরজঙ্গী মাজার, কমলাপুরের ফুটওভারব্রিজের ল্যান্ডিং সিঁড়ি একপাশে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। একই অবস্থা মতিঝিল গভঃবালক উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজেও। বনানী-১১নং রোডে ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি সব সময় কার্যকর থাকে না।

প্রতিবেদনে ফুটপাতের সম্পর্কে বলা হয়েছে, লালমাটিয়া ব্লক-ই বাবরী মসজিদ রোডের ফুটপাতের ভাঙা অংশ সংস্কার করা হয় না। রাস্তায় অবৈধ দোকান বসানোয় যানজট তৈরি হয়। ফুটপাতের প্রশস্ততা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এছাড়া লালমাটির ব্লক-‘ডি’তে ২৯৩ মিটার ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারের কাজ করা হয়েছে (মূল্যায়নের সময়)। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এর জন্য রাস্তার ফেরিওয়ালা এবং অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংও দায়ী। তাজমহল রোডে ৬৯৪ মিটার ডিভাইডার করায় যানজট কমেছে। শেরশাহ সুরি রোডে ৫১৩ মিটার রাস্তায় মালামাল রেখে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। রিংরোড থেকে কলেজগেট পর্যন্ত রাস্তায় অযাচিত গ্যারেজ ও খাবারের দোকান থাকায় কলেজ ছুটির সময় মাঝেমধ্যে যানজট হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খিলগাঁও আনসার ক্যাম্প সড়কে রাস্তায় অল্প কিছু গর্ত আছে এবং ফুটপাতে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়। খিলগাঁও আনসার ক্যাম্প থেকে বাকি সরণি পর্যন্ত রাস্তার পাশে আবর্জনার কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়। খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া সড়কে রিকশা ও ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় চলাচলে অসুবিধা হয়। এছাড়া গুলশান-১-এর ডিসিসি মার্কেটের কাছের যাত্রীছাউনিটি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম