মোহাম্মদপুরে দুই ভাইকে গুলি
নেপথ্যে কাঁচাবাজার দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব
আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি কাঁচাবাজারের সভাপতি আবুল হোসেন ও তার ছোট ভাই মাহবুবকে গুলির নেপথ্যে রয়েছে বাজার কমিটির দ্বন্দ্ব। মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি কাঁচাবাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গুলি করার আগে তাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি করা হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ সভাপতিসহ একাধিক ব্যবসায়ী এ অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা বা কেউ আটক হননি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলটির মালিকের পরিচয় জানতে তথ্য চেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। মামলা দায়েরের পর আসামির তালিকা এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলটির মালিকের নাম মো. মুরশিদ খান। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়।
স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে কাঁচাবাজারের সভাপতি আবুল হোসেন (৫০) ও তার ছোট ভাই মাহবুবকে (৪২) গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবুল হোসেনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর এবং মাহবুব মিয়া সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা তিনজন লোক নিয়ে প্রথমে বাজার কমিটির অফিসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে আসেন। একপর্যায়ে অফিসে আবুল হোসেনের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে সভাপতিকে হুমকি দিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেলে করে তিন-চারজন লোক এসে বাজার কমিটির অফিসে প্রবেশ করেন। এ সময় আবুল হোসেনের সঙ্গে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মোটরসাইকেলে আসা লোকজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে আবুল হোসেনকে গুলি করেন। গুলির শব্দ পেয়ে আবুল হোসেনের ভাই মাহবুব ছুটে গেলে তাকেও গুলি করা হয়। তখন সন্ত্রাসীরা দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেলেও একটি মোটরসাইকেল নিতে পারেননি।
গুলিবিদ্ধ সভাপতি আবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি সাত্তার, বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান ও আরও একজন (চেহারা চেনেন, নাম জানেন না) তার অফিসে আসেন। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে হুমকি দিয়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে তাকে গুলি করে। তার ভাই ফেরাতে গেলে তাকেও গুলি করা হয়।
আবুল হোসেন আরও অভিযোগ করেন, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোলেমান তরফদার বাজারটি দখলে নিতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চার বছর আগে কাউন্সিলর নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ তার লোকজনকে নিয়ে নির্বাচিত কমিটিকে বের করে বাজার দখলে নেন। সেসময় এই সাধারণ সম্পাদক সোলেমান কাউন্সিলর আসিফের লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতেন। এর মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজার দখল করে থাকা লোকজন পালিয়ে যান। তখন আমি আবার বাজারের দায়িত্ব বুঝে নিই। কিন্তু বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলে সাধারণ সম্পাদক পুরো বাজারটি দখল করে নিতে উঠেপড়ে লাগেন। তিনি মূলত বাজারের সভাপতি হতে চাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীরা আমাকে গুলি করার আগে কয়েকজন দোকানদারকে পিস্তল দেখিয়ে বাজার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। হুমকির পর তারা ভয়ে দোকান ফেলে পালিয়ে যান। আমাকেও প্রথমবার অফিসে গিয়ে বাজার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। নয়তো গুলি করে হত্যা করবেন বলে হুমকি দেন।
আবুল মিয়ার জামাতা মাহবুব বলেন, বিএনপি নেতা সোলেমান, তার ছেলে শাকিল, আবু তাহের ও জাহিদুল ইসলাম কালু বাজার দখল নেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। তারাই হত্যার উদ্দেশ্যে এবং বাজার দখলে নিতে আমার শ্বশুর ও তার ভাইকে গুলি করেছে। অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে ফোন নম্বর চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, গুলির ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা রাতেই মামলা করবেন। তিনি আরও বলেন, পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি। এছাড়া আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারসহ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহে কাজ চলছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার জানান, গুলির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মোটরসাইকেলটি চুয়াডাঙ্গার মুরশিদের : পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে এলেও গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি ফেলে যায়। সেটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ল ২৭-৬২৬৬। এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলটির মালিকের নাম মো. মুরশিদ খান। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদরের বাজরুগড়গড়ি এলাকায়। ২০১৫ সালের ৯ জুন মোটরসাইকেলটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। ১০ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রশেন ২০২৫ সালে শেষ হবে। মালিকের ফোন নম্বরের জায়গা শূন্য রয়েছে।