বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সাবেক মেয়র, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। সোমবার তার এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের হুমকি ও পালটা হুমকির প্রেক্ষিতে এখন তারা মুখোমুখি অবস্থান করছে জাতীয় পার্টি ও শিক্ষার্থী নেতারা। যে কোনো সময় তা সংঘাতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মোস্তাফিজারের বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সোমবার রাত ৩টায় তারা রংপুর নগরীর মেডিকেল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা জাপা নেতার বক্তব্য প্রত্যাহার ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, ছাত্র-জনতার মুক্তির লড়াই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান। অসংখ্য মৃত্যু আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যাওয়া সবার মুক্তির প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহরা চব্বিশ বিপ্লবের নায়ক, তাদের অবাঞ্ছিত করার এখতিয়ার জাতীয় পার্টির নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে রংপুরে জাতীয় পার্টির বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের প্রতিনিধি ইমরান আহমেদ, মোতাওয়াক্কীল বিল্লাহ শাহ্ ফকির, ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার আবারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সেখানেও দুই সমন্বয়কের পক্ষে মানববন্ধন করে জাপা নেতার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ওই সমাবেশে নেতারা বলেন, ‘আবু সাইদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ, আমার সোনার বাংলায় চাটুকারদের ঠাঁই নাই, স্বৈরাচারী ভাগছে দালালেরা জাগছে, যার নাই মেরুদণ্ড সে আবার দেখায় দম্ভ, স্বৈরাচারগুলি নাই তুই আবার কে ভাই, আবু সাইদের শহরে দালালের ঠাঁই নাই, আর কতদিন চাটাচাটি করবি তোরা জাতীয় পার্টি’ এসব স্লোগান দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আশিকুর রহমান, জীবন প্রধান অহি প্রমুখ।

সোমবার রংপুর জাতীয় পার্টির সেন্ট্রাল রোডের কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশে পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদেরের উপস্থিতিতে জাপা নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এরপর তাদের আর রংপুরে আসতে দেওয়া হবে না। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তারপরেও ফেসবুকে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ মেসেজ দেন তারা, তাহলে জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মী, সমর্থক যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রংপুরে পার্টি আফিসে চলে আসবেন। আমরা তাদের দেখিয়ে দিতে চাই রংপুরে জাতীয় পার্টির শক্তি কতটুকু। আমাদের আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য যদি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ঠেকাতে আসে আর তাদের সুপারসিট করে আন্দোলন যদি চালিয়ে যেতে না পারি, তাহলে নাকে খত দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে চলে যাব।’

তিনি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কান খুলে শোনেন, জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি থেকে ঘোষণা আসবে যে, সারজিস আলম আর হাসনাত আব্দুল্লাহর কোনো প্রোগ্রাম রংপুরের মাটিতে হতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা আছেন তারাও কান খুলে শুনে রাখেন, রংপুরে কোনো রাজনৈতিক সংলাপে যদি জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ করা না হলে, সে সংলাপ আমরা করতে দেব না। তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, সারজিস আর হাসনাতের মতো দুজন টোকাইকে প্রশ্রয় দেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

সাবেক মেয়র বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুরে সর্বতোভাবে অংশগ্রহণ করেছি। আমিসহ দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি। আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষাকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। রংপুরে জাতীয় পার্টি ছাড়া এতবড় বিশাল আন্দোলন কখনোই সফল হতো না। তার প্রমাণ আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অনেককে আসামি করা হয়েছে। আমাদের সরলতাকে দুর্বলতা ভাবার কোনো কারণ নেই।