Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজনৈতিক দলগুলোর নারী অন্তর্ভুক্তিতে অনীহা

ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব

বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ সবাই দলের গঠনতন্ত্র বাস্তবায়নে ব্যর্থ * জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী দেওয়া হয় না মনোনয়ন

Icon

রফিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব

ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ দেশের রাজনীতিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্তি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা থাকলেও দীর্ঘদিনে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের আশানুরূপ মূল্যায়ন করেননি নেতারা। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী নেত্রী মূল্যায়নের মানসিকতা অর্জন করতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, সব রাজনৈতিক দলকে নারীবান্ধব হতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষিত, যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই রাজনৈতিক দলের নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দেশের আইন বাস্তবায়ন জরুরি। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা নারীবিদ্বেষী সমাজে বসবাস করি। এখানে একটা জায়গায় নারীর দাঁড়ানোই অপরাধ। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ। তবুও এমন অবস্থার মধ্যে নারীদের এগিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নারীবান্ধব হতে হবে এবং শিক্ষিত ও যোগ্যদের মূল্যায়ন করতে হবে। শুধু অমুকের কন্যা, অমুকের পরিবার, অমুকের বান্ধবী, অমুকের স্ত্রী-এসব পরিচয়ে পদোন্নতি করলে হবে না। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নারীদের সঠিক মূল্যায়নের শক্তি রাজনৈতিক দলগুলোর থাকতে হবে। তাহলে নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত মোতাবেক ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধান রয়েছে। তবে এই বিধান বাস্তবায়ন করতে পারেনি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। কার্যত দুই দলের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও নারী নেতৃত্বে অংশগ্রহণ বাড়েনি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নারী নেতৃত্ব রয়েছে শতকরা ১৮ শতাংশ।

আর বিএনপির সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। একই অবস্থা ছোট ছোট সব রাজনৈতিক দলের। তারাও নিজেদের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। ঠিক কতদিনে এসব দলে নারীর নির্ধারিত কোটা পূরণ হবে-তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নারীরা। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং কিংবা আন্দোলন সংগ্রামের দৃশ্যমান উপস্থিতি থাকে তাদের। মাঠের আন্দোলনে নির্যাতন, নিপীড়ন ও জেল-জুলুমেও পিছপা হন না তারা। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশের নারীরা। জীবনে ঝুঁকিয়ে নিয়ে মাঠের আন্দোলনে সরব ছিলেন তারা। তবুও নারীদের দেশের রাজনীতিতে সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম যুগান্তরকে বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানসহ দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীরা ভূমিকা রাখছে। কাজেই আমরা নারীদের পিছিয়ে রাখতে পারি না। দেশের রাজনীতিতে অবশ্যই নারীদের থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের বিষয়ে আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) যা বলা আছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা বাস্তবায়ন করলে নারীরা রাজনীতিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলের নারী কোটা পূরণে সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগের। এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, দলীয় সভাপতি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সংসদ উপনেতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন নারীরা। কিন্তু দলটি ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণে ব্যর্থ। যদিও টানা ক্ষমতায় থাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনি এলাকায় যোগাযোগ বৃদ্ধি, নিজস্ব কর্মী-সমর্থক তৈরি, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দলের নিজস্ব জরিপে যেন নিজেদের নাম উঠে আসে তা নিয়েও কাজ করতে হবে নারী নেত্রীদের। কমিয়ে আনতে হবে অন্যের ওপর নির্ভরতা। তাহলে কমিটি গঠন কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করবে রাজনৈতিক দলগুলো। একই সঙ্গে নারীদের এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন তারা।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর লিপিকা বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, নারীদের এগিয়ে নিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সব থেকে বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই কম। এমন বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালার ধারাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম