হাতিরঝিলে তামিম হত্যা
বিএনপি নেতার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ
হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৫ জন রিমান্ডে * দায়িত্বে অবহেলায় ওসি প্রত্যাহার * মামুনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা * রবিউল আলমকে বিএনপির শোকজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর হাতিরঝিলে মহানগর প্রজেক্টে তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার সঙ্গে বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম ওরফে রবির সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগের এ কর্মী হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনের সংশ্লিষ্টতাও যাচাই করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ জানায়, মহানগর প্রজেক্টে ভবন নির্মাণের জন্য প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের সঙ্গে জমি নিয়ে পাঁচটি ফ্ল্যাট দেওয়ার চুক্তি হয় নিহত তামিমের বাবা সুলতান আহমেদের। তবে এ পর্যন্ত ডেভেলপার কোম্পানি তাকে দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে। বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করেছে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ। এ নিয়েই তিন বছর ধরে দুই পক্ষে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কমর্র্কতা মামুনসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকালে ভবনে ঢুকে অতর্কিতে হামলা করলে তামিম গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার রুহুল কবীর খান বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখছি না। আমরা তাদের অপরাধী হিসাবে দেখছি। সে যেই হোক, দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেব। আমরা প্রাথমিকভাবে তার (রবি) সম্পৃক্ততা পাচ্ছি। এ ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া মাদকের ওই কর্মকর্তাকে (মামুন) মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয়ও তদন্ত করে দেখব।
বিএনপি নেতার দায় কতখানি এমন প্রশ্নে রুহুল কবীর খান বলেন, জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব। সুতরাং তার (কোম্পানির এমডি) তো দায়ই থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।
রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি-এমন অভিযোগের বিষয়ে উপকমিশনার বলেন, আমরাও প্রাথমিকভাবে তার (ওসি) অবহেলা পেয়েছি। দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাতিরঝিল থানার ওসিকে এরই মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হাতিরঝিল থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার পাঁচ আসামিকে চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন-প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল লতিফ (৪৬), মো. কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), আলামত নষ্টকারী মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (১৯)।
তামিমের বাবা সুলতান আহমেদের মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন-মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মামুন (৪৫), প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম ওরফে রবি (৫৪), মো. ফজলুর রহমান (৭১), হাতিরঝিল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রশীদ ওরফে মামুন (৫৫), আরিয়ান, নাসরিন আক্তার (৪০), মো. রাসেল (৩৮), মাহফুজুর রহমান (৩০), প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের সিইও ফাইজুর আহম্মেদ (৫০), ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম (৪৫), আলামত নষ্টকারী ইমাম হাসান।
বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গ্রেফতার হওয়া প্লেজেন্ট প্রোপার্টিজের কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ (৪৬) ওই ফ্ল্যাটের সামনে ৭-৮ জন লোক নিয়ে তামিমের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তামিম লতিফের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকে তিনি ধাক্কা দেন। এ সময় সাদা টি-শার্ট পরা ও ফুল শার্ট পরা দুই তরুণ তামিমকে ধাক্কা দিতে দিতে সিঁড়ির কাছে নিয়ে যান। ২-৩ জন তামিমকে ধরে রাখেন এবং কালো টি-শার্ট পরা একজন ফ্ল্যাটের দরজায় লাথি দিতে থাকে। অন্য দিক থেকে আসা এক তরুণ লাঠি দিয়ে সিসিটিভি ভেঙে ফেলেন। পরে তামিমকে ধরে নিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতরে নিয়ে অনেক মারধর করা হয়েছে বলে পরিবার অভিযোগ করেছে।
এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবিকে শোকজ করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নয়াপল্টনে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে তামিমের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বাসার সামনে আনা হয়। তাকে দেখার পর পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বাদ জুমা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।