Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু ঝুঁকি বেশি চট্টগ্রাম-বরিশালে

২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ জনের মৃত্যু, ভর্তি ৪৯০

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু ঝুঁকি বেশি চট্টগ্রাম-বরিশালে

চলতি বছর রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে এখন পর্যন্ত এ দুই বিভাগেই গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম। সংশ্লিষ্টদের দাবি জনবহুল ঢাকায় ঘনবসতি ও এডিস মশা প্রজননের অনুকূল পরিবেশ বেশি। সে তুলনায় অন্য বিভাগে জনঘনত্ব ও মশার উপদ্রব কম। কিন্তু গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবার ঢাকার পরেই এই দুই বিভাগে ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি। ডেঙ্গুর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় মহানগরীর ৭টি এলাকাকে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ ডেঙ্গু সংক্রমণবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৯০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে ৩৪৭ জন। ঢাকার পর চট্টগ্রামে ৫৯, খুলনায় ৩৫, বরিশাল ২৭, ময়মনসিংহে ১৬ এবং রংপুরে ৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ২৪ ঘণ্টায় দুজনসহ এ বছর মোট মারা গেছেন ২০১ জন। জনস্বাস্থ্যবিদরা যুগান্তরকে বলেছেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে ৪০ হাজার ৮৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকার দুই সিটি করপোরশেনে ১৭ হাজার ১৯৫ এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ৫ হাজার ৭২০ জনসহ মোট ২৩ হাজার ৪৫৪ জন ভর্তি হয়েছেন। আর মারা গেছেন ১৪২ জন। ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮ হাজার ৮৭৭ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৮ হাজার ৩১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোর মধ্যে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মারা গেছেন যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও বরিশালে। চট্টগ্রামের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৪৯ এবং মারা গেছেন ২২ জন। এরপর বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। চলতি বছরের শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪৮ রোগী। এ সময় মারা গেছেন ২৩ জন।

এরপর খুলনায় ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ২০৫ এবং মারা গেছেন ১২ জন। ময়মনসিংহে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪৭, মারা গেছেন একজন। রাজশাহীতে ভর্তি ৯৯৩ এবং মারা গেছেন একজন। রংপুরে ভর্তি ৬১৬ জন এবং সিলেট বিভাগের হাসপাতালে সবচেয়ে কম ৭৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এই দুই বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রামের ৭ এলাকা রেড জোন : ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী ধারায় চট্টগ্রামের সাতটি এলাকা রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ৫ এলাকাকে হলুদ, ৭ এলাকাকে নীল ও ৪ এলাকাকে সবুজ জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। শুক্রবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সার্ভে প্রতিবেদনে এক মাসের অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্তের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে মহানগরীর কোতোয়ালি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৬, বাকলিয়ায় ১০৩, বায়েজিদে ৭৬, বন্দরে ৩৩, পাহাড়তলিতে ৩২, খুলশিতে ২৩ ও চকবাজারে ২০ জন। এসব এলাকা রয়েছে রেড জোনের তালিকায়। এছাড়াও পাঁচলাইশে ১৯, হালিশহরে ১৮, পতেঙ্গায় ১৫, চান্দগাঁওয়ে ১১ ও ডবলমুরিংয়ে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এসব এলাকা রয়েছে হলুদ জোনে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ ৭ ওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জনঅধ্যুষিত। এসব এলাকায় মশা নিধন কর্মসূচি জোরদার করা উচিত। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৫১৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই চিহ্নিত সাতটি ওয়ার্ডের।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, ৭টি ওয়ার্ডকেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়। ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে পাঁচলাইশ, হালিশহর, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং এলাকাও। যেসব এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব এলাকায়ও মশার তীব্র উৎপাত রয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আগস্ট থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে ১১ জন মারা গেছে। রোগী বেড়ে যাওয়ায় ২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১০টি ওয়ার্ডে ২২০টি বাড়িতে সার্ভে করি। এসময় মশার ডিম ও লার্ভা পরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, সেগুলোকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই তালিকা সিটি করপোরেশনে দিয়ে এলাকাগুলোতে মশা নিধনে বিশেষ নজর দিতে বলেছি। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রামের ফলে চলতি অক্টোবের এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যু হয়নি।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে আগস্টের শেষ থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। অল্প বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়। চলতি সেপ্টেম্বরেও থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, এজন্য মশাবাহিত এ রোগের বিস্তার ঘটেছে। ডেঙ্গু এখন মৌসুমি রোগ নয় এর প্রকোপ সারা বছর। এ জন্য জনসচেতনতাসহ চার পাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নজর দিতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে করণীয় মানতে হবে।

বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এডিস মশা নিধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। সে আলোকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা হচ্ছে, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় তৎপরতার অভাব। এডিস মশার প্রজনন স্থলের প্রাচুর্যতা বৃদ্ধি। দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরবর্তীতে ভাঙা রাস্তাঘাট, ডোবা-নালায় জমে থাকা পানি ও প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র যেমন-গাছের ছিদ্র, পাতার গোড়া, বাঁশের ছিদ্র এডিসের বংশ বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সিটি করপোরশেনে যেভাবে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড স্প্রে করা হয় সিটি করপোরেশনের বাইরে এর অভাব এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সিটি করপোরেশনের বাইরে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। শহর থেকে শহরের বাইরে যোগাযোগের সুবিধার্থে ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত এডিস মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম