Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর

নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৬৫৭৪ কোটি টাকা

একনেকে ১১ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৬৫৭৪ কোটি টাকা

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্পসহ ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এগুলো বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২৪ হাজার ৪১২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার ৭৪৬ কোটি ৬৬ লাখ, প্রকল্প ঋণ থেকে ১৬ হাজার ১২ কোটি ৩৩ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৬৫৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা এবং মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে তিন বছর।

এরপর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি কোথায় যায় এবং একজন অফিসার কয়টা করে জিপ গাড়ি ব্যবহার করেন-এসব খুঁজে বের করা হবে। এজন্য একনেক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, জেলা-উপজেলাসহ সারা দেশে সরকারি গাড়ির একটি তালিকা করা হবে। দেখা হবে কোন গাড়ি কোথায় আছে, কতদিন কার্যকর থাকে-সব তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩শ, ৪শ ও ৫শ শিক্ষক সবাই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য হতে চান। ছাত্রদের পড়াতে চান না কেউ। এটা কেন হচ্ছে?

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব আছে। আমরা এখন বিবিএস-এর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েছি। তারা যে হিসাব নিয়ে আসে আমি আইনগতভাবে শুধু স্বাক্ষর করা ছাড়া আর কিছুই দেখি না। তিনি আরও বলেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ কম। এদিকে আমরাও অনেক বেছে এবং যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প নিচ্ছি। আবার যেসব রাজনৈতিক প্রকল্প আছে কিছু এখনো শুরু হয়নি, সেগুলো নেওয়া হচ্ছে না। যেসব রাজনৈতিক প্রকল্পের কাজ শেষের পথে, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা না থাকলে শেষ করা হচ্ছে। ফলে সরকারি বিনিয়োগও কম হচ্ছে। এর কারণে অর্থপ্রবাহ কমে গেছে। গ্রামে মানুষ বলে ব্যবসা ভালো না। সেই সঙ্গে আগে রাজনৈতিক নানা কার্যক্রম ছিল, মিছিল, মিটিং সমাবেশ হলে ট্রাক ভাড়া করে লোক আনা হতো। এতে অর্থপ্রবাহ বাড়ত। এখন তো সেসব কার্যক্রম নেই। আমি বলছি না আবারও সেসব চালু করা হোক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে।

একনেক সভায় জানানো হয়, ১৯ হাজার ৫৬ কোটির সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৪২৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ প্রকল্পে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ঋণ হিসাবে দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ব্যয় বাড়ার কারণ হিসাবে ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি স্থানান্তর ও অন্যন্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচিত তিনটি অর্থনৈতিক গ্রোথ করিডরের অন্তর্ভুক্ত ৬টি সিটি করপোরেশন এবং ৮১টি পৌরসভার জলবায়ু সহনশীল নগর অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিষেবা বৃদ্ধি করতে ৫ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয়ে রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়াল ডেভেলপমেন্ট (আরইউটিডিপি) প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৪ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় ৮৮০ কিলোমিটার নগর সড়ক উন্নয়ন, ২০০০ মিটার ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, ২০০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে বা ফুটপাত নির্মাণ, ৫৯৫ কিলোমিটার স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও অন্যান্য কাজ করা হবে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল-কাম-রোড সেতু নির্মাণে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্প। এটিতে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ ১০ গুণ ব্যয়ে প্রকল্পটি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অনুমোদন পেয়েছে।

একনেক সভায় মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ছে ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে-কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমানোসহ ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানো। প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ২৯১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ৭৬০ মিটার বার্থ নির্মাণ, ৩৯৭ মিটার ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ, সড়ক প্রতিরক্ষাসহ ১৬.৫২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।

এদিকে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য একনেকে আরও ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-কুষ্টিয়া জেলায় নতুন সার্কিট হাউজ নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ভূঞাপুর-তারাকান্দি জেলা মহাসড়ক (জেড-৪৮০১) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বৈরাগীপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক (জেড-৮-৯১০) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চর কাউয়া) থেকে ভোলা (ইলিশ ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর (জেড-২৮২২) সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি গার্ডার সেতু (রাজাপুর সেতু) নির্মাণ এবং ৭.৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।

এছাড়া শিল্প ও শক্তি বিভাগের দুটি প্রকল্প একনেকে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর সিক্স এনওসিএস ডিভিশন আন্ডার ডিপিডিসি (বিশেষ সংশোধিত) এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম