Logo
Logo
×

শেষ পাতা

১৬ হাজার কোটি টাকার আখাউড়া-সিলেট রেল প্রকল্প

বাতিলের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ

দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে কি না দেখা হবে * জনগণের সুবিধা হলে ফের চালুর সিদ্ধান্ত * ঋণ নেওয়া হবে দাতা সংস্থাগুলো থেকে * অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাতিলের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ

ফাইল ছবি

আখাউড়া-সিলেট সেকশন রেললাইন প্রকল্প গত সরকারের আমলে বাতিলের কারণ খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থায়ন সংকটের কারণ দেখিয়ে মার্চে তৎকালীন রেলমন্ত্রী প্রকল্পটি বাতিল করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাতিলের পেছনে প্রকৃত কারণ, কেন বাদ দেওয়া হয়েছিল, প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি ও অনিয়ম ছিল কিনা, সংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। রোববার এ প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে অর্থ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টার একান্ত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, জনগণের জন্য সুবিধাজনক হলে আখাউড়া-সিলেট সেকশন রেললাইন প্রকল্প বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় কাজ চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) অর্থায়নের বিকল্প উৎস হতে পারে। অর্থায়নের উৎস নিশ্চিত করবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা আখাউড়া-সিলেট সেকশন রেললাইন প্রকল্পটি নিয়ে বৈঠক করেছি। এর সম্ভাব্যতাসহ নানা বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে উন্নীতকরণের প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক বৈঠকে। চীনের অর্থায়নে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে এটি বাস্তবায়নের কথা। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১৬,১০৪ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা কমানো হলে এ প্রকল্পে অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ করবে না বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়ে দেয় চীন। পরে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে দেশটি।

এরপর অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসাবে এগিয়ে আসে ভারত। শেষ পর্যন্ত তাতেও লাভ হয়নি। কোনোভাবেই অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি থেকে এটি বাদ দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে।

সূত্রমতে, বাতিল এ প্রকল্পের সার্বিক বিষয় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে একান্তভাবে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন। এতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার অংশ নেন।

ওই বৈঠকে বাতিল প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে আমলে নেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জনগণ উপকৃত হবে কিনা সে সম্ভব্যতা খতিয়ে দেখবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্ত হয়। তবে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, প্রকল্প থেকে জনগণ সুবিধা পেলে তা চালু করার পক্ষে একমত হয়েছেন দুই উপদেষ্টা। এছাড়া অর্থায়ন সংকটের কারণে প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে কিনা, এর পেছনে দুর্নীতি বা অনিয়ম ছিল কিনা সেটিও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সূত্র জানায়, প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ঢাকার সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ আরও সহজ করার লক্ষ্যে। ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ ডুয়েলগেজ রূপান্তরে আগামী ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রথমে ৬৬ দশমিক ১৬ শতাংশ অর্থায়নের কথা ছিল চীন সরকারের। চীনা অর্থায়নে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে।

প্রকল্প নিয়ে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের : সূত্র জানায় এ প্রকল্প নিয়ে শুরুতে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি ছিল। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ডুয়েলগেজ লাইন হলে ট্রেন চলাচলের হার (ফ্রিকোয়েন্সি) বাড়বে না। এ রুটে ডাবল লাইন এবং ডুয়েলগেজ নির্মাণ হলে প্রকল্পটি থেকে সুবিধা মিলবে। সেখানে আরও বলা হয় প্রকল্পে ব্যালাস্ট (পাথর), স্লিপার, রেলসহ অন্যান্য উপকরণের পরিমাণ ও ব্যয় চলমান সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় বেশি। সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় সমজাতীয় চারটি প্রকল্পের তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি। এত ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সমীচীন হবে না বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

ওই সময় প্রস্তাবিত প্রকল্পে কিমি.প্রতি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অন্যদিকে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেল লাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরে প্রকল্পে কিমি.প্রতি ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিমি.প্রতি ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ঈশ্বরদী থেকে পাবনা ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ। এছাড়া মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে কিমি.প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল আরেকটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় মাত্র ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম