উত্তরায় ছুরিকাঘাতে পাবনার যুবক নিহত
সোহানের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ডেকে নিয়ে খুন
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সোহান প্রামাণিক। ছবি: সংগৃহীত
পাবনার যুবক সোহান প্রামাণিকের (২৭) ঢাকায় ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলছে তার পরিবার। অথচ সোহানের মৃত্যুকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে। রোববার ভোরে রাজধানীর উত্তরায় ছুরিকাঘাতে সোহান নিহত হন। সোহান পাবনা সদর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের মো. কোবাদ প্রামাণিকের ছেলে।
জানা যায়, ঢাকার উত্তরা বিআরটিএ অফিসের লোক পরিচয় দিয়ে শনিবার (৫ অক্টোবর) এক ব্যক্তি সোহানকে ফোনে জানান, তোমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ৬ অক্টোবরের মধ্যে এসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে যেতে হবে। পরে সোহান ২ দিনের ছুটি নিয়ে শনিবার রাত ১২টার নাইট কোচে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। সোহান বাড়ি থেকে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা পর তার মা মলিনা খাতুনের মোবাইলে বিআরটিএ অফিসের লোক পরিচয় দিয়ে বলা হয় সোহান ঢাকায় রওয়ানা হয়েছে নাকি? সোহানের মা মলিনা খাতুন (৫৫) জানান, ছেলেতো ঢাকায় চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর ওই নম্বর থেকে আবারও ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, সোহান বাসে, ট্রাকে নাকি ট্রেনে আসছে? মা জানান ছেলে বাসে যাচ্ছে। এরপর রাত সাড়ে ৪টার দিকে ওই একই নম্বর থেকে ওর মাকে বলা হয় সোহান পৌঁছে গেছে। তখন মলিনা খাতুন সোহানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বলা হয় সে ওয়াশরুমে গেছে। এরপর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে একই নম্বর থেকে আবারও ফোন করে মলিনা খাতুনকে জানান, সোহান অসুস্থ তার রক্ত লাগবে।
এদিকে রোববার সাড়ে ৫টার দিকে রাকিব নামের একজন রিকশাচালক সোহানের মায়ের নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার ছেলের অবস্থা ভালো না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। রিকশাচালক রাকিব জানান, ভোরের দিকে একটি ট্রাক থেকে প্রথমে সোহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর রাকিব তাকে নিয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যান। রাকিব তার রিকশায় করে নিয়ে যাওয়ার সময় সোহানের কাছে জানতে চাইলে সোহান তাকে জানান, তার নাম সোহান, বাড়ি পাবনায়। হাউজ বিল্ডিং এলাকায় ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে তার টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। এর বাইরে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থা গুরুতর দেখে তারা তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
নিহত সোহানের মামাতো ভাই বিজ্ঞান প্রামাণিক জানান, রিকশাচালক তাদের জানান যে, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন সোহান এবং তিনি তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছেন। রিকশাচালক তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় সোহানই তাকে নম্বর দিয়ে বাড়িতে ফোন করতে বলেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনরা জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা বলেন, সোহানের মায়ের নম্বরে বিআরটিএর নাম করে ফোন করাটা রহস্যজনক। কেননা, তার নম্বর বিআরটিএর জানার কথা নয়। এছাড়া রাতে বিআরটিএ থেকে এতবার ফোন করবে কেন? কাজেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান। পরিবারের সদস্যরা জানান, রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সোহানের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। রাতে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর কথা। গ্রামবাসী জানান, সোহান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন কী হবে তাদের? বাবা-মাও কিছুতেই স্বাভাবিকভাকে মেনে নিতে পারছেন না এই মৃত্যু। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সোহানের বাবা-মা। শোকে পাথর হয়ে গেছে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুসলিমা খাতুন। তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথাও বলতে পারছেন না। শুধু বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছেন।
স্বজনরা জানান, দরিদ্র বাবা-মায়ের বড় ছেলে সোহান অর্থাভাবে বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেননি। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শেষ করে গাড়ি চালানো শেখেন এবং ঢাকার উত্তরা বিআরটিএ থেকে ট্রাক চালানোর লাইসেন্স করেন। দেড় বছর আগে বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম মুসলিমা খাতুন (২২)। এরই মধ্যে ৬ মাস হলো ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসাবে চাকরি নেন। চাকরির বেতনে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এবং দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট ভাইকে নিয়ে ভালোই চলছিল সবকিছু।