Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সেমিনারে দুই সমন্বয়ক

অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপ্লবী চেতনা ধারণের আহ্বান

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপ্লবী চেতনা ধারণের আহ্বান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সরকার গঠনের ২ মাস পূর্ণ হলো। এখন পর্যন্ত এমন পদক্ষেপ দেখিনি যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় এটা বিপ্লবী সরকার। আপনারা যদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে সুশীলতা দেখান তা দেখতে আমরা প্রস্তুত নই। তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের দোসরদের এই সরকারের সময়ে বিচার করার দাবি জানান। সংবিধানসহ ফ্যাসিস্ট আইনের সংশোধন দাবি করেন। শনিবার রাজধানীতে রাওয়ায় ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথির বক্তৃতায় তারা এসব কথা বলেন। সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা এ সেমিনারের আয়োজন করেন। এতে বক্তারা সামরিক বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধে কমিশন গঠন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে কমিশন গঠন, সংবিধান বাতিল ও আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেন।

সেমিনারে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের আগে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পেশাজীবী সংগঠনসহ অভিভাবকদের বিভিন্ন কর্মসূচি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল। ৫ আগস্টের পর এই সরকারের উচিত ছিল এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যা জাতির আত্মবিশ্বাসকে বাড়াবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, উপদেষ্টারা হয়তো ভুলে গেছেন, এটা বিপ্লবী সরকার। তাদের পদক্ষেপে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না তারা বিপ্লবী সরকার। এ সরকারে যারা রয়েছেন তাদের অনুধাবন করতে হবে কোনো সংবিধান মেনে এই সরকার আসেনি, কোনো নিয়ম মেনে এই সরকার আসেনি। তাই প্রতিটি ধাপে অনুধাবন করতে হবে এটা বিপ্লবী সরকার।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তাদের আহ্বান জানাব, বিপ্লবী সরকারের চেতনা ধারণ করুন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিন। সংবিধান ও নিয়মের বেড়াজালে সিদ্ধান্ত আটকে থাকলে আমরা আশাহত হব। আপনাদের কাছে প্রত্যাশা, কমিশন গঠন করে বঞ্চিতদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।

ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার দাবি করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড হলো ফ্যাসিবাদ কায়েমের প্রথম পদক্ষেপ। ওই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি নিয়ে বর্তমান জেনারেশন বেড়ে উঠেছে। সরকার ২ মাস পার করেছে। এখন তাদের প্রশ্ন করার সময় এসেছে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সংবিধান বহাল রেখে ফ্যাসিজম কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যেই সংবিধান আমাদের ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে, সেই সংবিধানকে বহাল রেখে বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যত অপশাসন হয়েছে তার বিচার নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করতে পারি না। সুতরাং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে পুনর্গঠন করুন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে ডিজিএফআইর বিভিন্ন কার্যক্রম বর্ণনা করে তিনি বলেন, পাসপোর্ট করতে গেলে ডিজিএফআই, স্কুলে ভর্তি হতে গেলে ডিজিএফআই, ছাত্র আন্দোলন দমাতে ডিজিএফআই, বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিজিএফআই, আসলে তাদের কী কাজ। পুলিশ তাদের পোশাক ও সংস্কারের জন্য দাবি তুলেছে। এখন বিগত ১৬ বছরে তাদের অপরাধ স্বীকার করে সংস্কারের বিষয়ে ডিজিএফআই থেকে বক্তব্য আসা উচিত। নইলে অতীতে যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দায়ভার নিতে হবে। জামায়াতের আমিরের একটি বক্তব্য ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক দলকে দেখছি ক্ষমা চাওয়ার আগেই ফ্যাসিস্টদের মাফ করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগতো ক্ষমাই চায়নি। তারা গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি। যারা ক্ষমা চায়নি, আপনারা কাদের ম্যান্ডেট নিয়ে তাদের ক্ষমা করে দিচ্ছেন? আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত ক্ষমা না চায়, যতদিন পর্যন্ত তাদের বিচার নিশ্চিত না হয়, যতদিন পর্যন্ত জনতা সিদ্ধান্ত নেয়, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাবলিক একসেস আমরা ছাত্র-জনতা কোনোদিন হতে দেব না।

নিয়ম মেনে গত তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়নি জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যারা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে শুনি উনি টুক করে দেশে ঢুকে পড়বেন। উনি নাকি এখনও নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গত তিন নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। ওই তিন সংসদে যারা সদস্য ছিল তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিতে হবে। তাদের সংসদ-সদস্য পদ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না? তারা যে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত দিতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, হাজার হাজার জীবন ও মানুষের রক্তের বিনিময়ে আপনারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কিংবা উপদেষ্টা হয়েছেন। এখনও হাসপাতালে অনেক মানুষ কাতরাচ্ছেন। রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। ক্ষতের সেলাই শুকায়নি। আপনারা যদি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে সুশীলতা দেখান সেটা দেখতে আমরা প্রস্তুত নই। আমাদের স্পষ্ট বার্তা, পুরো সিস্টেমটিতে আবার পচন ধরানোর জন্য অল্প কিছু পচা মানুষই যথেষ্ট।

তিনি বলেন, যে ফ্যাসিস্টরা হুকুম দিয়ে এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে অস্ত্র সরবরাহ করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে মানুষকে নির্মমভাবে মেরেছিল, তারা হয় দেশে আছে নয়তো বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। এ পালিয়ে যাওয়ার তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা। এখন দুটো বিষয় রয়েছে। হয়তো গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে তথ্য দিচ্ছে না। যদি তথ্য না দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তাদের ধমনিতে এখনও ফ্যাসিস্ট রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তাদের ছাঁটাই করুন। অথবা গোয়েন্দারা তথ্য দেওয়ার পরও সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদি ব্যবস্থা নিতে অযোগ্য হন, দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা করেছে তাদের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে শেষ করতে হবে। যদি এই বিচার না করতে পারেন, তাহলে যে রক্তের ওপর দিয়ে বসেছেন তার মর্যাদা নষ্ট করবেন।

সারজিস আলম বলেন, ব্রিটিশরা আইন করেছিল দাস বানানোর জন্য, পাকিস্তানিরা শোষণ করার জন্য আইন বানিয়েছিল। ওই আইন দিয়ে ২০২৪ সালে আমরা কেন চলব? স্পষ্ট কথা, শুধু সশস্ত্র বাহিনী নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় যেসব কালোহাত, ফ্যাসিস্ট তৈরির কারণে, আইনগুলো করে রেখেছে সেগুলো সমূলে উৎপাটন করতে হবে।

অতিথি বক্তব্যে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শুধু সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের হয়রানি করেনি, হাজার হাজার সৈনিককে শারীরিক নির্যাতন করেছে। তাদের ওপর ন্যায়বিচার করতে হবে। সামরিক বাহিনীর আইন সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রাহমান. লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাহির বীরপ্রতীক, কমান্ডার (অব.) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন প্রমুখ। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমান্ডার (অব.) নেসার আহমেদ জুলিয়াস।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম