
প্রিন্ট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-66fc6b594c6f8.jpg)
খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি
আরও পড়ুন
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে খেজুরবাগান এলাকায় খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে এ ঘটনা ঘটে। সোহেল রানা ওই প্রতিষ্ঠানের সিভিল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইনস্ট্রাকটর ছিলেন।
সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে খাগড়াছড়ি সদরে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। মিছিল বের করলে চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়া, পানখাইয়াপাড়ায় সংঘর্ষ বাধে। কয়েকটি দোকানও ভাঙচুর করা হয়, একটি বাড়িতে দেওয়া হয় আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সদর উপজেলায় বিকাল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। জোরদার করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল।
২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সেজন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। মঙ্গলবার আবার তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ১০-১৫ জন পাহাড়ি তরুণ সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় তাকে পুলিশসহ কয়েকজন রক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, ‘উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গিয়ে আমিও মার খেয়েছি। এখন ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাকর।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ এনে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা এমন তথ্য পেয়েছি। এ ঘটনার পর দুই পক্ষে (পাহাড়ি-বাঙালি) উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আমরা সক ইউএনওকে অবগত করেছি যাতে সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মামুনের স্ত্রী হত্যা মামলা করেন পলাতক তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তবে মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয় দোকানপাটে। সংঘাতে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা যান। রাতে খাগড়াছড়ি সদরে গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জেরে পরদিন রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। অনিক কুমার চাকমা নামের একজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।