Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্স

পুলিশকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর নির্দেশ

Icon

ইমন রহমান

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুলিশকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর নির্দেশ

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদস্যদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়াতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, পেশাদারি বজায় রেখে কাজ করতে হবে। জায়গাজমির বিরোধ এবং টাকা উদ্ধার সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যাবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করাসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এছাড়া আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদ্যাপনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।

সোমবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ডিএমপির আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (ক্রাইম কনফারেন্স) ডিএমপির শীর্ষ কর্তারা এসব নির্দেশনা দেন। তিন মাস পর পুলিশের নতুন প্রশাসনের অধীনে এটিই ছিল প্রথম ক্রাইম কনফারেন্স। মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান। সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বিভিন্ন জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এবং সব বিভাগের উপকমিশনারসহ (ডিসি) সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলা এ কনফারেন্সে চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের সঙ্গে গত বছরের অপরাধের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডিএমপিতে ২০টি দস্যুতা, ৪৭টি ধর্ষণ এবং ১৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে (২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ১৩টি দস্যুতা, ১৩টি ধর্ষণ, ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ১৪৭টি চুরি এবং অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক উদ্ধারের ১১৬৭টি মামলা হয়েছে। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চুরির ১০০টি এবং অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক উদ্ধারের ১৩৬টি মামলা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। বিশেষ করে ডিএমপির বেশির ভাগ থানা হামলার শিকার হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ডিএমপির সব পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরপরও পুরোদমে কাজ করতে পারছে না পুলিশ। নগরবাসী পাচ্ছে না পূর্ণাঙ্গ সেবা।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ক্রাইম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হওয়া প্রমাণ করে পুলিশের কার্যক্রমে গতি এসেছে। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। যে অবস্থা থেকে শুরু করেছি, পুলিশকে রিফর্ম করতে প্রথমদিকে আমাদের স্ট্রাগল করতে হয়েছে। আমরা কিন্তু এখনো সেই পুনর্গঠন পর্যায়ে আছি। আমরা চেষ্টা করছি ডিএমপিকে সাজানোর জন্য। অনেকে অনেক কথা বলছে। কিন্তু আমরা মনে করি, ডিএমপি সঠিক পথেই আছে। পুলিশের মনোবল বাড়ানোসহ সার্বিক বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। যেভাবে আগাচ্ছে, আমরা মনে করি, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ডিএমপি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ডিএমপির বর্তমান যে ম্যানেজমেন্ট আছে, তারা সততার সঙ্গে, সিনসিয়ারলি ও পেশাদারির সঙ্গে নগরবাসীর সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে চেষ্টা করছে।

ক্রাইম কনফারেন্সে অংশ নেওয়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরুতেই অফিসারদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বক্তব্য শোনেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রথমেই উঠে আসে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্যাট্রোলিংয়ের জন্য গাড়ির সংকটের বিষয়টি। এছাড়া সম্পূর্ণ ধ্বংস ডিএমপির ছয়টি থানা মেরামতের কার্যক্রম এখনো শেষ না হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। ওইসব থানার পুলিশ সদস্যরা সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন বলেও জানান। থানাগুলোর মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ী, ভাটারা, মিরপুর, উত্তরা পূর্ব ও রামপুরা থানা। সভায় মাঠ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেশির ভাগ থানার জনবল বদলি সংক্রান্ত আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। ফলে ডিউটি বণ্টনে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া মামলার ক্ষেত্রে পুরোনো অফিসাররা অসহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের আগে থেকে থানায় থাকা এসআই, এএসআই যারা আছেন, তারা অসহযোগিতা করছেন বলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ওসিরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংকটের পরও থানার স্বাভাবিক প্যাট্রোলিং পুরোদমে শুরু হয়েছে, চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধের জন্য তারা চেষ্টা করছে। চুরি-ডাকাতির পরিমাণও খুবই কম, রিকভারিও আগের থেকে ভালো।

ক্রাইম কনফারেন্সে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বলেন, মাঠ পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন-এমন কোনো ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যাবে না। আগের মতো অকারণে গ্রেফতার ও টাকাপয়সা লেনদেন করা যাবে না। ডিএমপির শীর্ষ কর্তারা নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশ যেন কোনো বিতর্কে না জড়ায়। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়-এমন কোনো কাজ যেন না করে, বিশেষ করে জায়গাজমি সংক্রান্ত ও টাকাপয়সা আদায় সংক্রান্ত কাজে কোনোরকম অ্যাকটিভিটিস যেন না শো করে। গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের ক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যদি প্রয়োজনীয়তা থাকে, তাহলে রিমান্ড চাওয়া হবে। এছাড়া অকারণে রিমান্ড চাওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশকে উদ্বুদ্ধকরণে। এক্ষেত্রে পুলিশ যে ক্রাইসিসে আছে, এখান থেকে তাদের মনোবল কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে ওসি, এসি, ডিসিরা সব ফোর্সের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সমস্যাগুলো অ্যাড্রেস করে স্বাভাবিক কাজে ফেরাতে উদ্বুদ্ধ করতে যা যা করণীয়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সবশেষে বলা হয়েছে, সামনে শারদীয় দুর্গোৎসব। এবার একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উৎসব হবে। পূজা উদ্যাপন যেন নির্বিঘ্নে হয়, সে বিষয়ে ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব পূজামণ্ডপে যেন সিসি ক্যামেরা থাকে, স্থানীয় সাধারণ মানুষকে নিয়ে কমিটি গঠন করে পাহারার ব্যবস্থা করা এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ছাড়াও থানা পুলিশের নিজস্ব সোর্স নিয়োগ করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

ক্রাইম কনফারেন্সে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন বিভাগের অফিসার ও ফোর্সদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।

মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল পার হয়ে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছি। আর এটি আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে।

মামলা নিষ্পত্তি ও মুলতুবি ওয়ারেন্ট তামিলের ওপর গুরুত্বারূপ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে অযথা বিলম্ব না করে দ্রুত করতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের কাছে না গেলে ইন্টেলিজেন্স পাওয়া যাবে না। তথ্য পাওয়ার জন্য নাগরিকদের কাছে যেতে হবে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে উদ্যাপন করতে পারে, সেজন্য এখন থেকে সবাইকে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম