চট্টগ্রাম বন্দরে তেলবাহী জাহাজে আগুন, মৃত্যু ৩
একাধিক তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন একটি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ নম্বর ডলফিন জেটিতে নোঙর করা ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ নামের জাহাজে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন-ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ফোরম্যান নুরুল ইসলাম ও শ্রমিক মো. হারুন। তিনজনই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ক্রুড অয়েল খালাসকালে জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা যায়, জাহাজটি বহির্নোঙরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে ১১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল নিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে খালাসের জন্য জেটিতে নোঙর করেছিল। কিছু তেল খালাসের পর হঠাৎ বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। আগুন নেভাতে কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, চট্টগ্রাম বন্দর ও ইস্টার্ন রিফাইনারির নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং টিম এবং একাধিক নৌযান সম্মিলতভাবে কাজ শুরু করে। দুপুর ২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরপরই আশপাশের জাহাজগুলোকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি।
বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকাণ্ডে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক। সোমবার বিকালে বিএসসির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। কারণ, অনুসন্ধানের জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের ক্ষতিপূরণ বাবদ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে বিএসসির বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাজে বিস্ফোরণের পরপরই পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। চারপাশে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মো. কফিল উদ্দিন জানান, কর্ণফুলী নদীতে একটি জাহাজে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, বন্দর, কর্ণফুলী ইপিজেড, সিইপিজেড স্টেশনের আটটি ইউনিট পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষের টাগবোট কান্ডারি ২, ৩, ৪, ৮, ১০ ও বিএন শিবশা আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। টাগবোটগুলো অগ্নিনির্বাপণে কাজ শুরু করে। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে জাহাজটির সামনের সব দড়ি পুড়ে গেছে। বিএসসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এমটি বাংলার জ্যোতি বেশ পুরোনো ট্যাংকার।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারি আলাদাভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইন্টার্ন রিফাইনারির তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শরীফ হাসনাত ও সদস্যসচিব মোস্তাফিজার রহমান। আরেকজনকে সদস্য রাখা হয়েছে।
বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) রুটিন দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, জাহাজে থাকা ১১ হাজার ৭০০ টন অপরিশোধিত ক্রুড অয়েলের কোনো ক্ষতি হয়নি।