চুরির অপবাদে গরম পানি ঢেলে পিটুনি
শ্রীপুরের ইসরাফিলের মৃত্যু

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই গাজীপুরের শ্রীপুরে এক তরুণকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে গায়ে গরম পানি ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ১৩ দিন চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইসরাফিলের মৃত্যু হয়েছে। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক মো. ইসরাফিল (২৪) শ্রীপুরের গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ি গ্রামের মো. নাসির উদ্দিনের ছেলে।
স্বজনরা জানান, ১৩ সেপ্টেম্বর নিজেদের বাড়ির ঘরে ঘুমিয়ে ছিল ইসরাফিল। সকালে এলাকার সোহাগসহ কয়েকজন তরুণ তাকে ঘুম তুলে স্থানীয় বেপারী বাড়ি জামে মসজিদের চুরি যাওয়া ব্যাটারি সম্পর্কে জানতে চায়। পরে তারা তাকে শৈলাট পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর ব্যাটারি চুরির অপবাদে ইসরাফিলের ওপর চলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড দিয়ে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত পেটানো হয়। কোমরের নিচে ঢালা হয় গরম পানি। এতে ইসরাফিলের দুই পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফোসকা পড়ে যায়। এ অবস্থায় নির্যাতনকারীরা ইসরাফিলের বুকে, পেটে, পিঠে লাথি মেরে মেরে পেটানোর উৎসব শুরু করে, করতে থাকে পৈশাচিক উল্লাস। ওই সময় ইসরাফিলের কোনো স্বজনকে কাছে যেতে দেয়নি। তারা কাছে যেতে চাইলে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর কামরুল হাসান লিটন, বাবুল মন্ডল, শফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসরাফিলের বাবা নাসির উদ্দিন। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই অভিযোগ মামলা হিসাবে নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
মূল অভিযুক্ত কামরুল হাসান লিটন (৫০) গাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, কামরুলের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ইসরাফিলের ওপর ওই নির্যাতন চালান।
নাসির উদ্দিন বলেন, ঘরে ঘুমিয়ে থাকা আমার ছেলেকে তারা ডেকে নিয়ে যায়। পরে বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে ছেলেকে তারা কয়েক ঘণ্টা পেটায়। এতেও ক্ষান্ত হয়নি তারা, এক পর্যায়ে চায়ের দোকান থেকে গরম পানি নিয়ে ইসরাফিলের গায়ে ঢেলে দেয়। এতে কোমরের নিচ থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পড়ে যায়। আমার ছেলে তখন পানি চেয়েছিল জীবনটা ভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু জীবন ভিক্ষা তো দূরের কথা, তারা পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেও নির্যাতনকারীদের মন গলাতে পারিনি। আমাদের দেখলে তারা নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিত।
ইসরাফিলের চাচা আব্দুর রহিম অভিযোগ করেন, মারধরের পর একটি ভ্যানে তুলে ইসরাফিলকে তারা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় থাকার তিন দিন পর আমার ভাতিজাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১৬ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালে বৃস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসরাফিল মারা যান।
এর পরপরই অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দিয়েছে। কামরুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে গাজীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ইসরাফিলের ওপর চালানো নির্যাতন সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। তবে এ ঘটনায় কামরুল আমাকে কিছুই জানায়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পূর্বের দেওয়া লিখিত অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে।