Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নাচোল পৌরবাসীর উন্নয়ন হয়নি

পৌরসভা ছিল মেয়রের টাকা কামানোর মেশিন

দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন করেন বাধাহীন লুটপাট

Icon

জোহরুল ইসলাম জোহির, নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পৌরসভা ছিল মেয়রের টাকা কামানোর মেশিন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালু একই সঙ্গে ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। পৌরসভায় এ দুই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক করেছেন দুর্নীতি ও অপকর্ম। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তার একক আধিপত্যে চলত নাচোল পৌরসভা। টানা দুইবার মেয়র থাকাকালীন সরকারি প্রকল্পে হরিলুট, হাট-ঘাটের টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ ও ভবন নির্মাণে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। পৌরসভাই ছিল তার ‘টাকা কামানোর মেশিন’।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬-২০২৪ পর্যন্ত প্রতি অর্থবছরে মশকনিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ প্রতিমাসে পৌরসভায় যে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ আসত, এর বেশির ভাগই মেয়র বাস্তবায়ন না করে বিল তুলে আত্মসাৎ করেছেন। পৌরসভা-২ শাখা থেকে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট (থোক বরাদ্দ) বাবদ পৌরসভার নতুন ভবন সম্প্রসারণের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালু পৌর ভবন নির্মাণ না করে ভবন নির্মাণের পুরো টাকাই ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে উত্তোলন করে নেন। কাগজে-কলমে ভবন নির্মাণ দেখানো হলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব নেই। পৌরসভার রেলস্টেশন পশুর হাটটি ২০২১ সালে ইজারা দেওয়া হয়। তবে ইজারার টাকা রাজস্ব খাতে বকেয়া দেখিয়ে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন মেয়র ঝালু খাঁন। হাটঘাট ছাড়াও পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণকাজ মেয়র নিজেই বেনামে কোটেশন দিয়ে করতেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে ড্রেন নির্মাণ ও স্যানিটারি নির্মাণকাজ থেকে মেয়র কোটি টাকা অবৈধভাবে কামিয়েছেন। পৌরসভার বেশির ভাগ প্রাচীন গাছগুলো কোনো টেন্ডার ছাড়াই মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালু নিজেই কেটে কয়েক লাখ টাকায় বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন। পৌরসভায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করতে পারলেও প্রতিবছর গ্রাহকের সংখ্যা বাড়িয়ে পানির বিল শাখা থেকে অর্ধকোটি টাকা লোপাট করেন। তার দুই মেয়াদে কোটি কোটি টাকা পৌরসভায় বরাদ্দ এলেও ১০ বছরে পৌরসভার সাধারণ নাগরিকরা তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি বলে পৌরবাসীর অভিযোগ রয়েছে।

নাচোল পৌরসভার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন দুই মেয়াদে মেয়র থাকালীন একই সঙ্গে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলত না। মেয়র পৌরসভার বেশির ভাগই প্রকল্পের অর্থ কাজ না করেই আত্মসাৎ করেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১০ বছরে নাচোল পৌরসভার তেমন কোনো উন্নয়ন না হলেও এ সময়ে মেয়র অবৈধ উপার্জনে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। পৌরসভাকে ব্যবহার করেই তিনি এ টাকা কামিয়েছেন। মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন নাচোলের বাজারপাড়ায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। রাজশাহীর ভদ্রায় রয়েছে তার একটি আবাসিক ফ্ল্যাট, ঢাকার বসুন্ধরায়ও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া নাচোলে নিজ বাড়ির সামনে বাগানবাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিদেশি জাতের গরুর খামার। মেয়রের স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলের নামে-বেনামে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে জমি, ব্যাংকে রয়েছে টাকা।

পৌরসভার সাধারণ নাগরিক রুহুল আমিন বলেন, আব্দুর রশিদ খাঁন একসময় নাসির বিড়ির এজেন্ট হিসাবে নাচোলে ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসায় তার দুই ভাইও জড়িত হন। কিন্তু গত ১০ বছরে তার ভাইদের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ মেয়র হয়ে ঝালু খাঁন যেভাবে সম্পদ করেছেন, তা বিস্ময়কর। মেয়র ২০১৫ ও ২০২১ সালে নাচোল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন ৭ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা কামিয়েছেন।

যেভাবে মেয়রের উত্থান : নাসির বিড়ির ব্যবসার পর ২০০৮ সালে আব্দুর রশিদ খাঁন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। এর পরপরই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বনে যান। এরপর দলীয় শক্তি ব্যবহার করে ২০১৬ সালে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তারপর আব্দুর রশিদ খাঁনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে পেশিশক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে নাচোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালুর মোবাইল ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর থেকে বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, কোনো মেয়র যদি পৌরসভায় অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকেন, তাহলে সেটি দুদক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরও ব্যবস্থা নিতে পারবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম