Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সঞ্চয়পত্র নিয়ে অর্থ বিভাগের পরিকল্পনা

‘বাজারভিত্তিক’ সুদহার চালু হচ্ছে

বেরিয়ে আসছে ফিক্সড হার থেকে * নিম্ন আয়ের আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত বেশি হবেন -মাহবুব আহমেদ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘বাজারভিত্তিক’ সুদহার চালু হচ্ছে

ফিক্সড (নির্ধারিত) হার থেকে বেরিয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ‘বাজারভিত্তিক’ হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য খাতের আমানতের সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করেই বাজারভিত্তিক নতুন সুদহার ঠিক করা হবে। এতে বাজারে অন্যান্য আমানতের সুদহার বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহারও উঠানামা করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাজার ভিত্তিক সুদহার ঠিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মূলত অভ্যন্তরীণ ঋণের ঝুঁকি মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিবেচনা করছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

বাংলাদেশকে দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের শর্ত হিসাবে এর আগে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ বাজারভিত্তিক চালু করা হয়। যে কারণে এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে দেশের ভেতর জ্বালানি তেলের মূল্য উঠানামা করে। একইভাবে সঞ্চয়পত্রের সুদহারও বাজারভিত্তিক চিন্তা করছে অর্থ বিভাগ। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি বন্ড, ব্যাংকের আমানতের সুদসহ অন্যান্য সুদহারের সঙ্গে মিল রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদহার উঠানামা করবে।

বাজারভিত্তিক সুদহার চালু হলে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক আছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জ হিসাবে থাকবে।

সূত্রমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর্থিক খাত সংস্কারের একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেখানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ‘বাজারের সুদের হারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় না থাকায় অভ্যন্তরীণ ঋণের পোর্টফোলিওতে ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ‘বাজারভিত্তিক’ করার বিষয়টি বিবেচনাধীন’। এ নিয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের পেছনে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরেও প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে সুদ পরিশোধ বাবদ। এছাড়া গত অর্থবছরে জুলাই থেকে মার্চ এই ৯ মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা এবং অর্থবছর শেষে সুদ পরিশোধ মোট সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তবে পুরো অর্থবছরের সুদ ব্যয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ প্রক্রিয়ায় জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সুদের হার বেশি থাকায় সঞ্চয়পত্রে সুদ খাতে বাজেটের অর্থ ব্যয় বেশি হচ্ছে। সরকারকে ঋণ করেই সুদ ব্যয় মেটাতে হয়। ফলে সরকারের ঋণে বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে।

বাজারভিত্তিক করার পর সঞ্চয়পত্র সুদহার বাড়লে সেটি যুক্তিসঙ্গত হবে, কিন্তু সুদহার কমলে ঠিক হবে না, বলে মনে করছেন সাবেক অর্থ সচিব (সিনিয়র) মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, বাজারে অন্যান্য সুদহার বর্তমান সঞ্চয়পত্রের সুদহারের কাছাকাছি বা বেশি বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারভিত্তিক করার পর সেটি বাস্তবায়ন সমস্যা হবে। কারণ এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত আপডেট থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, একজন নিম্ন আয়ের মানুষ এক লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মাসে একটি নির্দিষ্ট সুদ পান। কিন্তু বাজারভিত্তিক সুদহার বাস্তবায়ন হলে সুদের হার উঠানামা করবে। সেক্ষেত্রে সুদহার কমে গেলে গরিব মানুষের সঞ্চয়পত্র খাত থেকে আয় কমবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাস্তবায়নে যে ব্যবস্থাপনা দরকার সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৩ মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পূর্ণ মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

এসব সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারিত। কিন্তু বাজারভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার চালুর ধারণা এটি প্রথম। এ সুদহার চালু হলে নির্ধারিত সুদহার থাকবে না। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদহার উঠানামা করবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, ‘বাজারভিত্তিক’ সঞ্চয়পত্র সুদহার চালু কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটি ভাবার বিষয়। তবে বাজারভিত্তিক সুদহার সাধারণত মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান হারের তুলনায় বেশি হবে। এতে আমানতকারীরা উৎসাহিত হবেন। অপরদিকে সুদহার মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম হলে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রমুখী হবেন না। কারণ বিনিয়োগকারী মূল্যস্ফীতির কারণে সুদহার কমছে সেটি বুঝতে চাইবেন না। এতে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমবে। যদিও আমাদের বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্র খাত।

সূত্রমতে, আইএমএফের ঋণের একটি শর্ত হচ্ছে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে আনা। ফলে ইতঃপূর্বে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা ধরনে শর্ত আরোপের কারণে এর বেচাবিক্রি কমেছে। এখন সুদহার বাজারভিত্তিক করে অন্যান্য সুদহারের তুলনায় কমলে এ খাতে বিক্রি আরও কমে আসবে। যা পরোক্ষভাবে আইএমএফের শর্ত পূরণে সহায়ক হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম