Logo
Logo
×

শেষ পাতা

হাইকোর্টে নিয়োগ পাচ্ছেন কয়েকজন বিচারপতি

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল শিগগিরই পুনর্গঠন

Icon

আলমগীর মিয়া

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল শিগগিরই পুনর্গঠন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হচ্ছে। শিগগিরই ট্রাইব্যুনালে তিনজন বিচারক নিয়োগ হতে পারে। তিনজনের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, অপর দুজন ট্রাইব্যুনালের সদস্য। এ নিয়োগের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া।

সর্বশেষ ঢাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনজন বিচারপতি ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অবসরে গেলে সেখানে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সদস্য বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে যুক্ত হয়েছেন। অপর সদস্য বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে অব্যাহতি দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল বিচারকশূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও জানা যায়, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সপ্তাহে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। এবার হাইকোর্ট বিভাগে একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, পেশাগত দক্ষতা ও বৈষম্যবিরোধী চেতনা-এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বরাবরের মতোই রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-এ তিন ক্যাটাগরি থেকে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এদিকে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন সংস্থা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া সাবেক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মাজহারুল হককে কো-অর্ডিনেটর করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১০ সদস্যের তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন সংস্থায় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হত্যা-গণহত্যার ২৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এগুলোয় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিপরিষদের প্রভাবশালী সদস্যদের। এছাড়া গণহত্যার নির্দেশদাতা ও গণহত্যায় অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তার নাম আছে এ তালিকায়।

সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রসিকিউশন ও ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বোর্ডকে (ট্রাইব্যুনাল) পুনর্গঠন করা। আমরা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের সংস্কার কার্যক্রম এখানেই থেমে থাকবে না। যারা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তাদের সবার মতামত নিয়ে আইন সংশোধন করা হবে। ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ৮টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব প্রকাশ করা হয়। সংশোধনীতে কোনো রাজনৈতিক দল এ আইনের অধীনে অপরাধ করলে দলকে ১০ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধনীর ফলে এ আইনের অধীনে অপরাধ হতে পারে, এটি জানা সত্ত্বেও যদি কোনো সংস্থা, সংগঠন, দল, সংঘবদ্ধ চক্র বা সত্তার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাকেও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে; যা বর্তমান বিধান অনুসারে সম্ভব ছিল না।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৯ সেপ্টেম্বর এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের প্রথমদিকে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়ে যাবে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ বিচারগুলো শুরু হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যান, দুজন সদস্য থাকবেন। এখন একটি ট্রাইব্যুনাল হবে, পরবর্তী সময়ে মামলার সংখ্যা, মামলার কাজের ভলিউম দেখে সরকারের কাছে যদি মনে হয়, তাহলে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল বৃদ্ধি করতে পারে।

হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, বিচারপতি নিয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে। বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি হয়তো হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আমার মনে হয় হাইকোর্ট বিভাগে তিনি শিগ্গিরই বিচারপতি নিয়োগ দেবেন।

সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে চেয়ারম্যান এবং অধস্তন আদালতের (ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত অপরাধের বিচারক) দুজন বিচারককে সদস্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকও তালিকায় রয়েছেন।

জানা যায়, মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করলে হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতি তাতে রাজি হননি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হাইকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগের চেষ্টা চলছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এর ধারাবাহিকতায় ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন-এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন। আপিল বিভাগে শুধু থেকে যান বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। ১০ আগস্ট রাতেই হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দুইদিনের ব্যবধানে ১২ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত চার বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চার বিচারপতি হলেন-বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক।

এ অবস্থায় হাইকোর্ট বিভাগে দেখা দেয় বিচারক সংকট। বর্তমানে হাইকোর্টে ৭৮ জন বিচারপতির মধ্যে তিনজনকে বিচারকাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও হাইকোর্ট বিভাগে একশজন বিচারপতি ছিলেন। হাইকোর্টের নতুন বিচারপতি হিসাবে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন-এ নিয়ে আইনাঙ্গনে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, এ তালিকায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকে একটি বড় অংশ রয়েছে। পাশাপাশি আছেন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং অধস্তন আদালতের কয়েকজন বিচারকের নাম।

সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে গত ১৬ বছর যারা শপথভঙ্গ করে রাজনৈতিকভাবে বিচার করেছেন, যারা কিছু আইনজীবীর সঙ্গে সিন্ডিকেটে কাজ করেছেন, বিতর্কিত বিচারপতিদের অপসারণ করতে হবে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের সময়ের সবাই খারাপ নয়, ভালো বিচারপতিও আছেন। বিশেষ করে বিতর্কিত, শপথভঙ্গ করে রাজনৈতিক বিচার করেছেন বা দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন বা তদবিরে কাজ করেছেন এবং তদবিরে রায় দিয়েছেন, বাছাই করুন তাদের। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারের তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’

সংবিধানের ৯৫(১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়োগদান করবেন।’ ৯৫(২) অনুসারে, ‘কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছর অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে, বা (খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে, অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে, তিনি বিচারপতি পদে নিয়োগলাভে যোগ্য হবেন না।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম