Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ডলার সংকট ও সিন্ডিকেটের কারসাজি

চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়েছে চিনির দাম

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়েছে চিনির দাম

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে হঠাৎ বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি মন (৩৭.৩২ কেজি) চিনিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। আর কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চিনি পরিশোধনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চিনির দাম বাড়ছে বলে খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক জানিয়েছেন। পাইকারিতে প্রতি মন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা।

তিনদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকায়। অপরদিকে নগরীর খুচরা বাজারগুলোয় সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খোলা সম্ভব না হলে চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চিনি মুজত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে-এসব কারণেও বাড়ছে চিনির দাম।

বিভিন্ন সময় সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমদানিকারক, আড়তদাররা তোয়াক্কা করছেন না। তারা ইচ্ছামতো চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। চিনির বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক কয়েকটি সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে। সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন তারা। চিনির বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো ডলার সংকট চরমে। আগে বিভিন্ন তফশিলি ব্যাংকে ৫ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলা যেত। এখন ওই সুযোগ পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এখন ১০০ শতাংশ পেমেন্ট দিয়ে এলসি খুলতে হচ্ছে। এতে বেশির ভাগ আমদানিকারক এলসি খুলতে নিরুৎসাহী হচ্ছেন। এমনকি অনেক আমাদানিকারক এলসি খোলা বন্ধ রেখেছেন। এলসি খুলতে না পারার কারণে চিনি পরিশোধনে ব্যবহৃত কাঁচামাল কস্টিক সোডা, চিনি পরিশোধনে ব্যবহৃত লবণ (সালফাইড লবণ), চুনাজাতীয় পদার্থ ও এম্বাইর লাইট (পানি শোধনের কিট) আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব কাঁচামাল ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। ডলার সংকট ও পুরো টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে।

ফলে অনেক আমদানিকারক এলসি খোলছেন না। একইভাবে চিনির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ স্লিপ বাণিজ্য। খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে, যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে।

দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি; কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। এছাড়াও চিনি আমদানিতে হয় কাস্টমস ডিউটি, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ভ্যাট ও অগ্রিম কর, যা ৬১ শতাংশের মতো। এসব কারণে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানানা, কিছু বড় বড় গ্রুপ চিনির বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। প্রশাসন শক্ত হাতে সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে চিনির বাজারের অস্থিরতা কাটবে না। চিনির পুরো বাজারও এখন সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এমন ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে তবে ভোক্তারা সুবিধা পাবেন।

খাতুনগঞ্জের চিনি আমদানিকারক দিদারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, চিনির দাম বাড়ছে মূলত চিনি পরিশোধনে ব্যবহৃত কাঁচামালের অভাবে। কাঁচামাল না থাকায় বিভিন্ন চিনির কারখানা চিনি পরিশোধন করতে পারছে না। যে পরিমাণ পরিশোধিত চিনি রয়েছে, তা বাজারে পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে বাড়ছে চিনির দাম। এছাড়া আরও নানা ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম