Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ডিএসইর পর্ষদ গঠন

তৃতীয়বারেও ভুল সিদ্ধান্ত

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একই ভুল বারবার করলে তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তৃতীয়বারেও ভুল সিদ্ধান্ত

ফাইল ছবি

শুরুতে বড় বিতর্কে পড়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি)। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠন নিয়ে এই বিতর্ক। এ বিষয়ে তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে কমিশন। কিন্তু তারপরও নিয়েছে ভুল সিদ্ধান্ত। সেখানেও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চারদিকে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেনকে নিয়োগের বিষয়টিও ব্যাপক সমালোচিত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানসহ কমিশন সদস্যদের বাজার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে বাজারে কমিশনের অদক্ষতা ফুটে উঠছে। আর অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, একই ভুল বারবার করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি গত ১৫ বছরে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের পর এই খাতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আগের চারজন কমিশনারের মধ্যে তিনজনকে বাদ দিয়ে পুনর্গঠন হয় কমিশন। নতুন চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকছুদ, অন্যান্য কমিশনারদের মধ্যে-মো. আলী আকবর এবং ফারজানা লালারুখ। এছাড়াও আগের কমিশনার হিসাবে রয়েছেন মো. মোহসিন চৌধুরী। নতুন কমিশন গঠনের পর মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি কমিশনের দুর্বলতা ও অদক্ষতা সামনে আসে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে কমিশনের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। কারণ একই ভুল একবার করা যায়। কিন্তু বারবার করলে মানুষ প্রশ্ন করবে, বিষয়টি উনারা নিজেরা বোঝেন কিনা। আবার এভাবে ভুল হতে থাকলে সামনে কীভাবে চলবেন। ফলে পুরো বিষয়টি বাজারের আস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে বিদ্যমান আইনকানুনের মধ্য থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এখানে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তবে এসব বিষয়ে কমিশনের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পর্ষদে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে ৩ জনের ক্ষেত্রেই আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এরা হলেন-ডিএসইর সাবেক এমডি মাজেদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং শেয়ারবাজার ডেস্কের প্রধান ড. নাহিদ হোসেন। তবে বিতর্ক শুরু হলে ড. নাহিদ ছাড়া বাকি দুজন নিজ থেকেই সরে দাঁড়ান। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এ দুজনের স্থানে নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরা হলেন-হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এএফ নেসারউদ্দিন ও জেডএন কনসালট্যান্টের সিইও সৈয়দা জাকেরিন বখত নাসির। কিন্তু এখানেও আইনের ব্যত্যয় হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠায় তারাও যোগ দেননি। পরে নিয়োগ দেওয়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানকে। এই সিদ্ধান্তেও আইন লঙ্ঘন করেছে বিএসইসি। কারণ স্টক ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩-এর ৫ ধারার ‘কে’ উপধারায় বলা আছে-কেউ তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক এবং কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করে থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কিন্তু মোমিনুল ইসলাম এক বছর আগেও তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

এছাড়াও ওই আইনের ৫’র ধারার ‘সি’ উপধারায় বলা আছে, গত তিন বছরের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পার্টনার হিসাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্য হবেন না। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা যথেষ্ট শেয়ারধারীও স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। আইনের ‘(ডি)’ উপধারায় বলা হয়েছে, বিগত ৩ বছরের মধ্যে কেউ স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে কোনো সম্মানি নিয়ে থাকলে তিনিও স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার যোগ্য হবেন না। আগে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, এই ধারা বিবেচনায় তারা কাজে যোগদান করেননি। তবে এখনও বহাল আছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেয়ারবাজারে বহু বিতর্কিত ড. নাহিদ হোসেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে শেয়ারবাজার ডেস্কের প্রধান হিসাবে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা প্রথমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। সেখান থেকে শক্তিশালী লবিংয়ে আসেন প্রশাসন ক্যাডারে। এরপর বিদ্যুৎ গতিতে পদোন্নতি হয়। ২০২০ সালের ৫ জুন উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পান। ৩ বছর ১০ মাসের ব্যবধানে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল তাকে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সরাসরি ঘনিষ্ট ছাত্রও ছিলেন নাহিদ হোসেন। এ কারণে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে শিবলীর পুনঃনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট থেকেও সুবিধা নেন তিনি। এই দুই প্রতিষ্ঠানে নাহিদ হোসেন অতিথি শিক্ষক হিসাবে ক্লাস নেন। প্রতি লেকচারের জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।

আবার তাকেই ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবার মুখে মুখে। কারণ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অর্থ মন্ত্রণালয়। আবার স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, আবার যিনি সুনির্দিষ্টভাবে শেয়ারবাজারের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি কোনোভাবেই ডিএসইর পরিচালক হতে পারেন না। এর ফলে এই কর্মকর্তা স্টক এক্সচেঞ্জে কোনো অনিয়ম করলে বিএসইসি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। কারণ তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরে ক্ষমতাবান।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুসারে স্টক পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ৬ জন, সেনাবাহিনী মনোনীত ১ জন, ট্রেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ৪ জন, কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ১ জন এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে পর্ষদে পরিচালক থাকেন। বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে বিতর্ক চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম