Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রতিরোধ কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্রুতগতিতে বাড়ছে

গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ৫৬১

Icon

মতিন আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্রুতগতিতে বাড়ছে

রাজধানীসহ সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দ্রতগতিতে বাড়ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে চলতি বছরের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করছে সেপ্টেম্বর মাস। এডিস মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলতি মাসের বাকি সময় এবং আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ ও সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, এতদিন রাজধানীর দুই মেয়র এবং ওয়ার্ডভিত্তিক কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলররা মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধক কার্যক্রম তদারকি করতেন। ঢাকার দুই নগর সংস্থার মেয়রদের বরখাস্ত করা হয়েছে। আর অধিকাংশ কাউন্সিলর পলাতক রয়েছেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। 

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এদিকে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে ৫৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মশার প্রজনন ধ্বংস কার্যক্রম ভাটা পড়ায় পরিস্থিতি আবারও ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবও সে কথাই বলছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯, মৃত্যু ৩ জন। মার্চে আক্রান্ত ৩৫১, মৃত্যু ৫ জন। এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪, মৃত্যু ২ জন। মে মাসে আক্রান্ত ১২, মৃত্যু ৬৪৪ জন। জুনে আক্রান্ত ৭৯৮, মৃত্যু ৮ জন। জুলাইয়ে আক্রান্ত ২ হাজার ৬৬৯, মৃত্যু ১২ জন। আগস্টে আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২১ ও মৃত্যু ২৭ জন। চলতি সেপ্টেম্বরে ১০ দিনে চলতি বছরের রেকর্ড পরিমাণ আক্রান্ত ৪ হাজার ৪৪৩ জন এবং মারা গেছেন ১৯ জন। অর্থাৎ চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৩১৫ জন এবং মারা গেছেন ১০২ জন। 

এ প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, এ বছরের শুরু থেকে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হয়েছিল। এডিসের প্রজনন ধ্বংসে সতর্কতা ও করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। এজন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এডিসের প্রজনন ধ্বংসে এখনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আগামী মাসে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। 

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি মেম্বর ড. জিএম সাইফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মেয়র ও কাউন্সিলররা থাকতে কিছুটা কাজ হতো। এখন না থাকাতে সেটাও হচ্ছে না। এডিসের প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আগামী মাসে আরও খারাপ হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা দরকার। 

রাজধানীসহ সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনার চেয়ে অ্যাকশনে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা সে অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। এছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু ও মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা করা হয়েছে। সভা ফলপ্রসূ হয়েছে; ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো এডিস মশার প্রজনন ধ্বংসে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৯৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৪১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৫১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) আট জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯ জন এবং রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪৬০ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম