পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট
এক ছবিতে অভিনয় করেই প্লট বাগিয়ে নেন চিত্রনায়ক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফিন শুভ/ফাইল ছবি
‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ নামক একটি ছবিতে অভিনয় করে পুরস্কার হিসাবে প্রায় ১২ কোটি টাকার প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন চলচ্চিত্র অভিনেতা মাহাবুবুল আরিফিন শুভ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে তাকে ১০ কাঠার প্লট দেওয়া হয়েছে। তার প্লটের আইডি নম্বর-০১-৪০৩-০০৮, কোড নম্বর-১৯০৮৯৯। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বরের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে এই প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদিকে অভিনেতা আরিফিন শুভকে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজউকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংরক্ষিত যে কোটায় (১৩-এ ধারা) আরেফিনকে প্লট দেওয়া হয় সেখানে বলা হয়েছে-সংসদ সদস্য, বিচারপতি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা; যারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদান রেখেছেন, তাদেরকে এ ধারায় প্লট দেওয়া যায়। তবে এ ধারার শর্ত অনুযায়ী যাদের রাজউক এলাকায় প্লট বা ফ্ল্যাট রয়েছে, তারা প্লট পাওয়ার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হন না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রাজউকের উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত এক আদেশে আরিফিন শুভকে প্লটের চূড়ান্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি কাঠা ৩ লাখ টাকা দামে ১০ কাঠা জায়গার মূল্য পরিশোধ করেছেন ৩০ লাখ টাকা। যদিও ওই সেক্টরের প্রতি কাঠা জায়গার বাজার মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে চলচ্চিত্র অভিনেতা শুভ পেয়েছেন প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের প্লট।
প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংরিক্ষত কোটায় আরিফিন শুভকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার চাইলে ওই বরাদ্দ বাতিলও করতে পারে।
শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আরিফিন শুভ। ব্যক্তিজীবনে আওয়ামী লীগ ও শেষ হাসিনার অন্ধভক্ত এ অভিনেতা তোষামোদি দিয়েই বাগিয়ে নিয়েছিলেন শেখ মুজিবের চরিত্র। তার হাসিনা ও মুজিবপ্রীতি এতটাই বেশি ছিল যে, এ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য নেননি কোনো পারিশ্রমিক। মাত্র এক টাকার বিনিময়ে ৮৩ কোটি টাকা বাজেটের এ সিনেমায় মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেন শুভ। আর এ কাজের জন্য প্রতিদানস্বরূপ সংরক্ষিত কোটায় রাজউকের দশ কাঠার একটি প্লট বাগিয়ে নেন এ অভিনেতা।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ১৮তম বোর্ড সভাটি হয়। এ সভাতেই আরিফিন শুভর নামে দশ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিনেতার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিয়ে বরাদ্দের এ সিদ্ধান্ত জানান। সেসময় প্লট পেয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শুভ। বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার মমতা ও সান্নিধ্যে আশ্রয় পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ ২০২১ সালের ৯ জুন ফেসবুকে এক টাকার চেকের পাতার ছবি শেয়ার করে শুভ বলেছিলেন, ‘অর্থ দিয়ে হয়তো পার্থিব কিছু সুখ পাওয়া যাবে, কিন্তু আত্মার তৃপ্তি মিলবে না। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় আমার জীবনের সেরা এক চরিত্র। কারণ এটা আমার কাছে আবেগের একটা নাম। সেখানে তাই টাকাটা মুখ্য নয়। এটা আমার জীবনের অন্য রকম এক স্বীকৃতি। এই আত্মতৃপ্তি সারাজীবনের, যা টাকায় পরিমাপ করা যায় না।’
এদিকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই চিত্রনায়ক আরিফিন শুভকে নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে সিনেমাপাড়ায়। আলোচনায় উঠে আসছে তার সেই দশ কাঠার প্লট। অনেকেই জানতে চাইছেন, সেই প্লটের এখন কী হবে? নেটিজেনরা বলছেন, ধূর্ত এ অভিনেতা তার মাস্টার প্ল্যানে বেশ সফল হয়েছেন। এক টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে তিনি মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে খুশি করে পরবর্তীতে প্লট ভাগিয়ে নিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও তিনি আওয়ামী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন সেটা প্রকাশ করেছেন তার কর্ম দিয়ে। সেজন্যই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ৯ আগস্ট নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী স্বৈরসরকারের আমলের নিয়োগসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রের অনিয়ম-দুর্নীতির সংস্কার চলছে। এরই প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি অঙ্গনের নানামহলে অভিনেতা আরিফিন শুভর বরাদ্দকৃত প্লট বাতিলের দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুভর উচিত ওই জমি সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়া। কেউ কেউ অবিলম্বে রাজউকের দেওয়া এই বরাদ্দ বাতিলের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের অর্থ অপচয় করে শেখ মুজিবের জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণে যে বাজেট খরচ করা হয়েছে সেটারও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন অনেকে। তাদের মতে, একটি নিুমানের সিনেমার জন্য এত টাকা কখনোই প্রয়োজন হয় না। এখানেও লুটপাট করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে অভিনেতা আরিফিন শুভর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভি করেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।