Logo
Logo
×

শেষ পাতা

মামলার ভার কমছে খালেদা জিয়ার

মানহানির ৫ মামলায় খালাস

মহিউদ্দিন খান রিফাত

মহিউদ্দিন খান রিফাত

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মামলার ভার কমছে খালেদা জিয়ার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অনেকটা ফুরফুরে বিএনপি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একের পর এক কারাবন্দি নেতাকর্মীরা মুক্তি পাচ্ছেন। দলটির সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার ভারও কমতে শুরু করেছে। বিগত সরকারের আমলে করা মানহানির পাঁচ মামলা থেকে মঙ্গলবার খালাস পেয়েছেন তিনি। এর আগে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার দুই মামলা থেকে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত ১ মাসে ৭টি মামলা থেকে খালাস পেলেন তিনি। এছাড়াও তদন্তাধীন ও বিচারাধীন আরও ৩০টি মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়েই হাঁটতে চান দলটির আইনজীবীরা। তাদের প্রত্যাশা শিগগিরই বিগত সরকারের আমলে করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলাগুলো থেকে পুরোপুরিভারে মুক্তি পাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিএনপি ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

খালাস পাওয়া ৫টি মামলার মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত চারটি এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত একটি মামলা খারিজ করে তাকে খালাসের আদেশ দেন। এদিন মামলাগুলো শুনানির জন্য ছিল। তবে মামলার বাদীরা আদালতে হাজির হননি। কয়েক বছর আগে মামলার বাদী এবি সিদ্দিকী মারা গেছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। পরে আদালত তাকে মামলাগুলো থেকে খালাসের আদেশ দেন।

জানা যায়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর অভিযোগে আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি এবি সিদ্দিকী মানহানির মামলা করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির স্থায়ী কমেটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি এবি সিদ্দিকী আরেকটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে এবি সিদ্দিকী আরও একটি মামলা করেন।

এদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা আছে, তার সবই ভিত্তিহীন। বিএনপি চেয়ারপারসন মঙ্গলবার পাঁচ মামলায় খালাস পেয়েছেন। দেশে আইনের শাসন কায়েম হওয়া শুরু হয়েছে। যে কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) এসব ভিত্তিহীন মামলা থেকে আইনগতভাবেই রেহাই পাচ্ছেন। বাকি যে মামলাগুলো আছে সেসব মামলা থেকেও তিনি শিগগিরই আইনগতভাবে মুক্তি পাবেন।

জানা যায়, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। পুলিশ, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেন। দুর্নীতি, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ, ঋণখেলাপি ও মানহানির মতো অভিযোগ করা হয়েছে এসব মামলায়। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থায় ৪টি মামলা হলেও বাকিগুলো পরবর্তী সময়ের। এসব মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দায়ে সাজা হয়েছিল খালেদা জিয়ার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ৬ আগস্ট ওই দুই মামলায় তার সাজা মওকুফ করে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি। ৩ সেপ্টেম্বর মানহানির আরও ৫ মামলা থেকে খালাস দেন আদালত।

আদালত ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখনো বিচারাধীন মামলা রয়েছে তিনটি, স্থগিত ১৪টি, আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে ৩টির, বাকিগুলো তদন্তাধীন রয়েছে। অন্যান্য মামলায় জামিনে আছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা হয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে হয়রানি করেছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার। একইভাবে সারা দেশে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা, হাজার হাজার মানুষ গুম-খুন-হত্যা করেছে শাসকগোষ্ঠী। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যারা আছেন, তারা ন্যায়বিচার করবেন। আমাদের নেত্রী রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্তি পাবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে করা মামলা থেকে রেহাই পাবেন।

বিএনপির দপ্তর ও আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, খালেদা জিয়ার ৩৭টি মামলার মধ্যে দুর্নীতির পাঁচটি, মানহানির ৫টি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও ঋণখেলাপির একটি করে। বাকিগুলো হত্যা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, মুক্তিযুদ্ধের শহিদের নিয়ে কটাক্ষ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। ঢাকায় ২৮টি ও ঢাকার বাহিরে ৯টি মামলা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মামলার তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ২০১৫ সালে। ২০১৩, ১৪, ১৬ সালেও আরো বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। ঢাকাসহ কুমিল্লা, খুলনা, নড়াইল ও পঞ্চগড়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা এসব মামলা করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির এই চারটি মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।

অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে কুমিল্লায় তিন মামলা, ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা, গুলশানে বোমা হামলার অভিযোগে মামলা, ২০১৪-১৫ সালে হত্যার অভিযোগে মামলা, রাজধানীর দারুস সালাম থানায় নাশকতার ৮ মামলা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৩ মামলা, ঢাকার বাইরে মানহানির মামলা, খুলনায় অগ্নিসংযোগের মামলা, পঞ্চগড়ে নাশকতার মামলা, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ মামলার সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম