গার্মেন্টে চাকরি দাবি, নিয়োগে চান নারী-পুরুষ সমতা
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে শান্ত টঙ্গী গাজীপুর আশুলিয়া
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চাকরির দাবি এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার টঙ্গী ও গাজীপুরের কয়েকটি স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। এছাড়া আশুলিয়ায় ডিইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তবে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকায় বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং কারখানাগুলোয় স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চলে। তবে বিক্ষোভে আতঙ্ক ছড়ালে আশুলিয়ায় ৩০টি কারখানা এবং টঙ্গী বিসিকসহ আশপাশের ১৫টি কারখানায় ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা, হাজির পুকুর, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ও প্রীতি গার্মেন্টসহ বেশ কয়েকটি গার্মেন্টের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে শিল্প পুলিশের এএসপি মোশরাফ হোসেনসহ পাঁচজন আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলোয় নিরাপত্তা দিতে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার সকালে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শিল্পকারখানা ছাড়া বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল। সোমবার রাত থেকে গাজীপুরসহ চারটি শিল্প এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে।
সকাল ১০টার দিকে সাইনবোর্ড ও মালেকের বাড়ি এলাকা থেকে শ্রমিকরা সরে গেলেও বেলা ১১টার দিকে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝাতে সক্ষম হন। এদিকে মঙ্গলবার গার্মেন্ট কারখানায় নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। টঙ্গী, গাছা ও বাসন থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং তিনি কারখানার মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কর্মপরিবেশ নিয়ে কথা বলেন। মঞ্জুরুল করিম রনি যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় পলাতক আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা ভর করেছে। তাদের উসকানিতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বিএনপি এই সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে একটি সুন্দর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়। এ সময় টঙ্গী থানা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপি নেতা আ ক ম মোফাজ্জল হোসেন, টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন, সাধারণ সম্পাদক গাজী সালাহ উদ্দিন, কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, যুবদল নেতা ফয়েজ বিন প্রবাল প্রমুখ।
গাছা থানা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গাছা থানা বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন প্রমুখ। বাসন থানা এলাকায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ আহমেদ, বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত বাবু ও যুব নেতা সুমন পালোয়ানসহ দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, সকাল থেকেই গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিনিসহ পাঁচজন পুলিশ আহত হন। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় টঙ্গী বিসিকে বিএনপি-পুলিশ যৌথ পাহারায় বসে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় থানা ও শিল্প পুলিশ উপস্থিত ছিল। এদিকে চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, দুই কর্মকর্তার পদত্যাগসহ আট দফা দাবিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিনদিন ধরে বাটা শু কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী ৬ শতাধিক শ্রমিক টঙ্গী বাজার এলাকায় কারখানার মূল ফটকের সামনে এ বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে কর্মহীন কয়েকশ শ্রমিক সকাল ১০টা থেকে গাজীপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মহাসড়ক থেকে চলে যান তারা। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার টঙ্গী বিসিকসহ আশপাশের প্রায় ১৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়ায় ৩০ কারখানায় ছুটি : ডিইপিজেড পুরোনো জোনের প্রধান ফটকের সামনে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শ্রমিকরা। মঙ্গলবার জামগড়া, জিরাবোসহ আশপাশের পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নাশকতার আতঙ্কে ছুটি ঘোষণা করা হয় শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানায়। এ সময় আন্দোলনকারীদের লাঠিসোঁটা বহন করারও খবর পাওয়া যায়। নারী-পুরুষের দলগুলো ডিইপিজেডের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা কঠোর অবস্থানে থাকায় তাদের ভেদ করে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের দাবি, পুরুষদের চাকরি নেই পোশাক কারখানাগুলোয়। নারীদের শুধু চাকরি হয়। তাই তারা চাকরির জন্য আন্দোলন করছেন।
ডিইপিজেডে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য আছে কি না, তা জানতে বেপজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সূত্র জানায়, ঢাকা ইপিজেডে মোট ৭৯ হাজার ৫৮৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে নারী শ্রমিক ৪০ হাজার ৮১৮ জন এবং পুরুষ শ্রমিক ৩৮ হাজার ৭৭০ জন। শতকরা হারে নারী ৫১ শতাংশ ও পুরুষ ৪৯ শতাংশ। শ্রমিক সুজন বলেন, যারা আন্দোলন করছেন, তারা শ্রমিক নন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তাদের আচার-আচরণে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে। শ্রমিকনেতা খায়রুল মামুন মিন্টু মনে করেন, একটি গোষ্ঠী পোশাক খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কোথাও কোথাও ঝুট ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক কর্তৃপক্ষও জড়িত। তিনি খাতটিকে বাঁচাতে এখনই কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ জানান, বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী কথিত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বেপজার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে।