সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী
সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিতে বলা হয়েছে। রোববার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে কোন পদ্ধতিতে সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীর কাছে অর্জিত সম্পদের হিসাব চাইবে। এটা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। সম্পদের হিসাব নেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের মতো কোনো ধরনের গাফিলতি করা হবে না। তিনি আরও বলেন, আমি যেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশনে সচিব হিসাবে কাজ করেছি, সেহেতু এ বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সম্পদের হিসাব চাওয়ার একাধিক পদ্ধতি রয়েছে। আমরা কোন পদ্ধতিটা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব তা চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সচিব আরও বলেন, আমরা যা করব, সবকিছুর সঙ্গে গণমাধ্যমকে রাখতে চাই। কোনো কিছু গোপনে হবে না। সব প্রকাশ্যে করা হবে।
গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুসারে সর্বস্তরের কর্মচারী প্রতি ৫ বছর অন্তর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি উল্লেখ করে হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি বা তারাও সম্পদের হিসাব স্বেচ্ছায় দেননি। শুধু ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছে ২০১৫ সালে একবার সম্পদের হিসাব নেওয়া হয়েছে।
তবে কৃষি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সব ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে বলেছেন উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। তার আগে আইন মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণকর্মচারী আচরণবিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী সম্পদের হিসাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ চলছে। প্রত্যেক কর্মচারীর কাছে তার এবং তার ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী, সন্তান, নির্ভরশীল বোন, ভাই থাকে তাদেরও সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। এছাড়া তাদের পৌষ্যদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। নির্ভরশীল ভাই ও বোনের ব্যাখ্যা দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিধবা বোন ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। অনেক সময় প্রতিবন্ধী ও মানসিকভাবে অসুস্থ ভাই কর্মকর্তার সঙ্গে একত্রে বসবাস করেন। অনেকে তাদের নামেও সম্পদ করে থাকেন। বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে।
সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি হিসাবে একজন সরকারী কর্মচারীকে সংজ্ঞায়িত করে। বিদ্যমান ১৯৭৯ সালের গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালার ১৩ ধারা অনুযায়ী, বেসামরিক কর্মচারীরা চাকরিতে যোগদানের সময় তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন বা থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, শেয়ার, সার্টিফিকেট, বিমা পলিসি এবং অলঙ্কার ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক। প্রতি ৫ বছর অন্তর তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবশ্যিকভাবে সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণ দাখিল করতে হবে।