Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সুজনের গোলটেবিলে বক্তারা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

কিছুকাল পরপর স্বৈরশাসক তাড়াতে মানুষ প্রাণ দেবেন এটা হতে পারে না * ৫ বছরে ২০০ কোটি টাকা বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

রাজনৈতিক দলের অধীনে দেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। পক্ষান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮) নির্বাচন মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার ভবনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ দাবি করেন। এতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন সংশোধনসহ বেশ কিছু প্রস্তাবও করা হয়।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়।

আলোচনায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া আমাদের উপায় নেই। আমরা বারবার স্বৈরাচার তাড়াচ্ছি। কে স্বৈরাচার না? রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক করার এটিই সুযোগ। দলগুলোকে জোর করে হলেও গণতান্ত্রিক চর্চা করানোর চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, কিছুকাল পরপর স্বৈরশাসক আসবে আর তাকে তাড়াতে সাধারণ মানুষ প্রাণ দেবেন, রক্ত দেবেন-এটা হতে পারে না। এবারের আন্দোলনেই যেন এই রীতি চিরতরে শেষ হয়ে যায়।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিচারপতি রউফ ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে তিনি মনোনয়ন প্রথা বন্ধের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ২০ কোটি টাকায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আরও ২০ কোটি টাকা নির্বাচনের মাঠে খরচ করে নির্বাচিত হয়ে ৫ বছরে ২০০ কোটি টাকা বানানোর যে প্রক্রিয়া রাজনীতিতে চালু হয়েছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

মনোনয়ন প্রথা তুলে দিতে পারলে ৮০ ভাগ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বাংলাদেশে দিতে হবে। জনগণ প্রার্থীকে নয়, দলকে ভোট দেবেন। যতদিন মনোনয়ন প্রথা থাকবে ততদিন দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, গত ৫৩ বছরে ১২টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনই শুধু তুলনামূলক স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। তিনি বলেন, অন্যায় করে পার পাওয়ার একটা রীতি তৈরি হয়েছে। এই পথ সঙ্কুচিত করতে হবে। তাহলে প্রত্যাশিত পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, কতজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বৈধতা পাবে, তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি ব্যয় মনিটরিং করার সিস্টেম নেই। এটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি কীভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকা প্রয়োজন। তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেই কেউ তাদের ইচ্ছামতো আইন পাশ করতে পারবে না। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করে এটা করতে চায় না।

তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে কোনো দল ৬০ শতাংশ বা তার বেশি আসনে জয়ী হয়ে সরকারে যায়। তারা ৭০ শতাংশ মানুষকে শাসন করে। এই পদ্ধতির পরিবর্তন করে নির্বাচিত হতে অন্তত ৫১ শতাংশ ভোট পাওয়ার নিয়ম করা প্রয়োজন। এছাড়া দ্বৈত নাগরিকরা ভোট দিতে পারলেও তারা যেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, এমন বিধান করা উচিত।

ফেমার মনিরা খান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করা। জনগণের কাছে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বলেন, এটিএম শামছুল হুদা কমিশন না ভোটের বিধান যুক্ত করেছিলেন। কিন্তু তা কার্যকর ছিল না। তারপরও আওয়ামী লীগ সরকার বিধানটি বাতিল করেছে। তাই না ভোটকে কার্যকর করে পুনরায় এই বিধান যুক্ত করতে হবে।

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, কত শতাংশ ভোট না পড়লে সেই নির্বাচন বাতিল হবে, তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। কারণ বর্তমানে ১ শতাংশ ভোট পেলেও জনপ্রতিনিধি হতে বাধা নেই। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণতান্ত্রিক না হয়, তাহলে আমাদের আলোচনা নিষ্ফল।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা ছাত্র রাজনীতি চাই। তবে লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি চাই না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নতুন প্রস্তাবনা আনতে হবে। বিজয়ীদের যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০(খ) ধারায় বর্ণিত রাজনৈতিক দলের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন না থাকার বিধান কার্যকর করা। আরপিওর ৯২ ও ৯৩ ধারায় বর্ণিত দায়মুক্তির বিধান বাতিলের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া;

সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা; ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া; ভোটার তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ নিরসনের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; তালিকায় জেন্ডার গ্যাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করা; নির্বাচনি হলফনামায় প্রার্থীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সঙ্গে অর্জনকালীন মূল্যসহ বর্তমান বাজারমূল্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করার বিধান করা; হলফনামা যাচাই-বাছাই করে অসত্য তথ্য দেওয়াদের প্রার্থিতা বাতিল করা;

নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনকে যথাযথ করা; ইসির নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা; নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং উক্ত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের ব্যাপারে বিবেচনা করা; নির্বাচন কমিশনারদের বয়স ন্যূনতম ৪৫ করা ইত্যাদি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম