২৪ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি হাসান ও সাইফুলের
এমএ কাউসার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউতে) রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন হাসান ও সাইফুল। হাসান মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও তাকে হেমার দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। এ কারণে তার মাথার খুলি ভেঙে মগজ বের হয়ে যায়। ঘটনার ২৪ দিনেও ফেরেনি তাদের জ্ঞান।
অন্যদিকে ইয়াস শরীফ খান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পায়ে। অপারেশন করার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকেও রেফার করা হয় আইসিইউতে। তার জ্ঞান কিছুটা ফিরলেও স্বজনদের কাউকে চিনতে পারছেন না। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন জানিয়েছেন, আইসিইউতে থাকা শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন মনে হলে তাদের ঢাকায় পাঠানো হবে।
চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন মো. হাসানের বন্ধু মো. জাকির বলেন, ‘হাসান ৪ আগস্ট টাইগারপাস এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। একপর্যায়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই সে লুটিয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের কর্মীরা এরপরও তার মাথায় হেমার দিয়ে আঘাত করলে হাসানের মাথার খুলি ভেঙে যায়। তার মগজ বেরিয়ে পড়ে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। তবে ২৪ দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। হাসান নগরীর হালিশহর এলাকার গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।’
৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন মো. সাইফুলের বাবা মো. আলতাব হোসেন বলেন, ‘সাইফুল সিআরবি এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সেদিন রাত ৮টায় আমরা খবর পাই। রাত সাড়ে ১১টায় ফেনী থেকে আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি। সেদিন থেকেই তাকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। সাইফুল আমার একমাত্র ছেলে। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, এই বুঝি কেউ এসে বলবে আমার ছেলের জ্ঞান ফিরেছে। এ কারণে বারান্দা ছেড়ে কোথাও যাই না। সাইফুল ফেনীর একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। চট্টগ্রামে তার চাচার বাসায় বেড়াতে এসে আন্দোলনে বের হয়েছিল।’
১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ইয়াসের বাবা মো. এজাজ খান বলেন, ‘১৬ জুলাই নগরীর ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ইয়াসকে ভর্তি করাই। এর মধ্যে ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে বহদ্দারহাটে সংঘর্ষে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ওইদিন রাতে চমেক হাসপাতাল থেকে ফোনে জানানো হয়, ইয়াস আহত হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে এসে দেখি ছেলে আমার রক্তাক্ত। আমি হার্টের রোগী। সহ্য করতে পারছিলাম না। তার অপারেশনের পর অবস্থার অবনতি হলে ৩ আগস্ট তাকে আইসিইউতে রেফার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘দুই ছেলের মধ্যে ইয়াস ছোট। সে খুব আদরের। তার মুখে একবার বাবা ডাক শুনতে আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার কোনো ত্রুটি নেই। তবে কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রামে মারা গিয়েছিল ৮ জন : কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জুলাই মুরাদপুরে সহিংসতায় চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম, ওমরগনি এমইএস কলেজের স্নাতক প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ ফারক মারা যান। ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে সহিংসতায় সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর আহমেদ (১৮) ও মুদি দোকানের কর্মচারী সায়েম হোসেন (১৪) মারা যান। ২৩ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, চাঁদপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বাসের হেলপার আবদুল মজিদ এবং ৩ আগস্ট বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মুদি দোকানদার মো. শহীদ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের মধ্যে বর্তমানে ২২ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজন ছাড়া বাকিদের অবস্থা উন্নতির দিকে। তিনজনের মধ্যে হাসান ও সাইফুলের জ্ঞান এখনো ফেরেনি। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। প্রয়োজন হলে তাদের ঢাকায় রেফার করা হবে।’