Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ আগুন

লুটপাট করতে গিয়ে নিখোঁজ ১৭৬: কেউ অরাজকতা, লুটপাট করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা * দলীয় নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে ব্যবস্থা : বিএনপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ আগুন

ছবি সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসীতে সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয়বার আগুন দেওয়া হয়েছে। রোববার রাতে ফ্যাক্টরির একটি ৬তলা ভবনে দুর্বৃত্তরা আগুন দেওয়ার পর টানা চেষ্টা চালিয়ে সোমবার বেলা ৩টায়ও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। এদিকে ফ্যাক্টরিতে মালামাল লুট করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন ও লুটপাটকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে গাজী টায়ার, গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানায় ঢুকে ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করেন। একপর্যায়ে ওই দুটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর রূপগঞ্জের নবকিশলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামি গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর থেকে গ্রেফতার এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোপর্দ করার পর আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ খবরের পরই রোববার সন্ধ্যার দিকে কয়েক শ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে পড়েন। এরপর আবারও সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু হয়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ৬তলা ভবনের ভেতরে ঢোকেন কয়েক শ লোক। ওই ভবনে কেমিক্যাল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভেতরে লুটপাট নিয়ে দুটি পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। তখন একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর আকুতি জানান বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন।

খবর পেয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস, ডেমড়া ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসসহ ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।

এদিকে ভবনে ঢুকে নিখোঁজ হয়েছেন-এমন ব্যক্তির খোঁজে কারখানায় ভিড় করছেন স্বজনরা। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাব, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার।

বরপা বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খান, শাহিনসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হননি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে, ‘আমরা ভবনে আটকা পড়েছি। আমাদের বাঁচান।’ এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

কোনাপাড়ার রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার মেয়ের জামাই হযরত আলী গাজী টায়ার কারখানায় মালামাল নিতে এসেছেন। বাড়ি থেকে বলে এসেছেন। এখন আর তার খোঁজ পাচ্ছি না। শুনছি আগুন লাগছে যেই ভবনে, সেখানে আটকা পড়েছেন।

মাসাবোর আসাদ মিয়া বলেন, ছোট ভাই বাবু মিয়া কসাইয়ের কাজ করে। বন্ধুদের সঙ্গে গাজীর কারখানা থেকে মাল নিতে গিয়েছিল। রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি।

বরপার সুরাইয়া বেগম বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার নাতি নীরব ও তার বন্ধু মিল্লাত মিলে টায়ার কারখানায় ঢোকে। পরে যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেই ভবনে আটকা পড়ে। এখন আর খোঁজ পাচ্ছি না।

ভয়াবহ এ আগুনে কারখানার আশপাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প-কলকারখানা এবং এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যাপারে বলা যাবে। বিকাল ৫টা পর্যন্ত স্বজনরা আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দলীয় নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজী অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের রুটি-রোজগারের জায়গা এ কারখানা। কারখানা ধ্বংস করলে এখানে কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কোথায় যাবে?

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ অরাজকতা, লুটপাট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। প্রচলিত আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে কারখানার পক্ষ থেকে বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম