Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দাবি আদায়ের শহর ঢাকা

আন্দোলনকারীদের দখলে সড়ক, যানজটে ভোগান্তি

ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ, করতে পারছে না স্বাভাবিক কাজকর্ম * দুই সপ্তাহে অন্তত ৫ শতাধিক সংগঠন রাজপথে নেমেছে

Icon

কাওসার মাহমুদ

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আন্দোলনকারীদের দখলে সড়ক, যানজটে ভোগান্তি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রতিদিনই কোনো না কোনো দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে আসছেন আন্দোলনকারীরা। সচিবালয় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনেও আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবি আদায়ে সমবেত হচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ৫ শতাধিক সংগঠন বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছে।

রোববারও বিভিন্ন দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব, সচিবালয়ের সামনে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে প্রায় অবরুদ্ধ প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন এভাবে মিছিল-সমাবেশের কারণে গোটা রাজধানীই যেন দাবি আদায়ের শহরে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণ, স্থায়ীকরণ, পুনর্বহাল, পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারসহ নানা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের বঞ্চিতরা। এদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ আনসার, বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়ার, শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরীরা। সকাল থেকেই কয়েক হাজার আনসার সদস্য চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সুপ্রিমকোর্টের সামনে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে তারা কদম ফোয়ারা মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।

আনসারদের পক্ষে একজন সমন্বয়ক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। দাবি আদায়ের জন্য আমরা সচিবালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, আনসার সদর দপ্তরসহ যেখানে যাওয়া প্রয়োজন, সেখানেই যাব। যা করা দরকার তা-ই করব। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাচ্ছি না।

এদিকে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাল্টিপারপাস হেলথ ভলান্টিয়াররা। তাদের দাবি, এসএইচভিদের চাকরি পুনর্বহাল ও স্থায়ীকরণ, ভাতা বিলুপ্ত করে বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান, সিভিএইচসি কর্তৃক এমএইচভি সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার নোটিশ প্রত্যাহার।

একই স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। এখানে কর্মসূচি পালন করে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হন। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের মাঝে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরীরা। তারা পল্টন থেকে প্রেস ক্লাব অভিমুখী সড়ক বন্ধ করে নানা স্লোগান দেন।

এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদেরও পাঁচ দাবিতে মানববন্ধন করতে দেখা গেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণের পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, প্রতিবছর কমপক্ষে দুটি পরীক্ষা নেওয়া, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষা পাশ নম্বর ৪০ করা, আইনজীবী তালিকাভুক্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে নেওয়া। বাংলাদেশ বৈষম্যবিরোধী শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তারা এসব দাবি জানান।

এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসব সংগঠনের অবস্থানের কারণে সড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ ছিল সকাল ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পথচারীরাও। পথচারীদের ভাষ্য, এতদিন কেউ কোনো দাবি জানায়নি। এখন সুযোগ পেয়ে যে যার মতো রাস্তা বন্ধ করে দাবি জানাচ্ছে। মনে হয় দাবি আদায়ের শহর এই ঢাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (সভাপতি) রুহুল আমিন গাজী রোববার প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারকে অন্তত এক বছর সময় দিতে হবে। ১৭ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি, এখন তারা কথা বলতে পারছে। কিন্তু তাদেরও বুঝতে হবে, পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের কোষাগারকে একদম শূন্য করে গেছেন। এখন চাইলেই তো সবার দাবি পূরণ করে অর্থসংস্থান করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরে সরকারকে স্থিতিশীল হওয়ার সময় দেওয়ার আহ্বান জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম