Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রোহিঙ্গা ঢলের ৭ বছর

এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রত্যাবাসন

Icon

জসিম উদ্দিন, কক্সবাজার

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রত্যাবাসন

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ৭ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। দিন যত যাচ্ছে ততই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একরকম ধামাচাপা পড়ে গেছে বহুল কাক্সিক্ষত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় দেশে ফিরে যেতে আবারও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন তারা। মিয়ানমারে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ কেউ কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।

এদিকে একটি পাইলট প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সাত হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলে সেটাও আর সম্ভব হয়নি। উলটো মিয়ানমারে অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গৃহযুদ্ধের কারণে সম্প্রতি এ বিষয়ে আলোচনা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের জন্য টাকা-পয়সা খরচ না করে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে যতটুকু চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা করে দ্রুত সবার প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করুন। এটাই আমাদের অনুরোধ সবার কাছে। আজ ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রোহিঙ্গারা দেশে প্রত্যাবাসনের দাবিতে ক্যাম্পে বিক্ষোভ করবেন বলেও জানান এ রোহিঙ্গা নেতা।

অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে কিছু কার্যক্রম দেখালেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে প্রমাণ করে প্রত্যাবাসন ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য, এমনটি দাবি খোদ রোহিঙ্গাদের।

কক্সবাজারের উখিয়ার ২২ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আকবর হোসেন ও সলিম উল্লাহ বলেন, ৭ বছর ধরে স্বদেশে ফেরার ইচ্ছায় কঠিন জীবন পার করছেন ত্রিপলের নিচে। কিন্তু এখনও ফেরার সুযোগ হয়নি। দুজনেরই দাবি, ৭ বছর ধরে ত্রাণ পেলেও কবে তারা নিজ দেশে ফিরতে পারবেন তা কেউ বলতে পারছেন না। সলিম উল্লাহ বলেন, ‘ত্রাণ সহায়তা ঠিকমতো পাচ্ছি কিনা, সেটা জিজ্ঞেস করে। অথচ, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কিছুই বলে না ত্রাণদাতা সংস্থার কর্তারা। সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘ক্যাম্পে ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ, ইউএন আছে; তারা ঠিকমতো খাদ্য দিচ্ছে। কিন্তু দেওয়ার সময় স্বদেশে ফিরে যাওয়ার কথা কেউ বলে না।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন বলেন, পাইলট প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সাত হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলে সেটাও আর সম্ভব হয়নি। উলটো মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের কারণে আপাতত সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘনত্ব কমাতে নোয়াখালীর ভাসানচরে গড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ১ লাখ রোহিঙ্গার আবাস গড়া হয়েছে।

মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন বলেন, গত ৭ বছরে ক্যাম্পে দেড় লাখের বেশি শিশু জন্ম নিয়েছে। সূত্রমতে, দিন দিন রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারের জন্য বাড়তি বোঝা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি বারবার উঠলেও সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় বের হচ্ছে না।

পুলিশ বলছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অস্থিরতা বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে এ পারে অস্ত্র আনার প্রমাণও মিলেছে অভিযানে। ফলে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যাম্পকেন্দ্রিক কঠোর নজরদারি, সশস্ত্রগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সজাগ থাকার কথা বলেছেন অভিবাসন ও রোহিঙ্গা বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর। তিনি বলেন, ক্যাম্পকেন্দ্রিক কোনো অপরাধ যেন না হয় এটা সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিলে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হবে সশস্ত্র রোহিঙ্গাগোষ্ঠী।

সূত্রমতে, শরণার্থী হিসাবে বাংলাদেশে প্রথম রোহিঙ্গারা প্রবেশ করে ১৯৭৮ সালে। দ্বিতীয় দফা রোহিঙ্গারা আসে ১৯৯১-৯২ সালে। তৃতীয় দফা প্রবেশ করে ২০১৬ সালে। সর্বশেষ মোটাদাগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে ২০১৭ সালের আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে। সে সময় প্রায় দুই মাসে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

আগের রোহিঙ্গা এবং নতুন করে আসা রোহিঙ্গা মিলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ লক্ষাধিক। বিগত ৬ বছরে নতুন করে জন্ম নিয়েছে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশু। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১৩ লক্ষাধিক, যার অর্ধেকের বেশি এসেছে ২০১৭ সালে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম