Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড

হাজার কোটি টাকা লোপাট সাঈদ খোকনের

পরিচালক করেছেন স্ত্রীসহ পরিবারের ৮ সদস্যকে

Icon

কায়েস আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাজার কোটি টাকা লোপাট সাঈদ খোকনের

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। ৮ উদ্যোক্তা পরিচালককে সরিয়ে স্ত্রী, বোন, ভগ্নিপতিসহ পরিবারের ৮ সদস্যকে করেছেন এর পরিচালক। এভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছেন বলে বিতাড়িত পরিচালকরা অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, সাঈদ খোকনকে আটক করে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানের নথি পরীক্ষা করলেই তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে।

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০০ সালে নিবন্ধিত একটি সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রথম শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি হিসাবে এটি ২০০৯ সালে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে এটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রাহকের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি আশানুরূপ প্রিমিয়ামও দিয়েছে।

ডিএসসিসির সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি সাঈদ খোকন ২০১২ সালে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আগের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেই ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। দীর্ঘ ১২ বছর নির্বাচন ছাড়াই বেআইনিভাবে তিনি এ পদে বহাল থেকে নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

আর এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন কোম্পানির সিইও মো. আব্দুল খালেক মিয়া, সিএফও মো. মঈনুল আহছান চৌধুরী (সোনার বাংলা ও তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স থেকে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বহিষ্কৃত) এবং কোম্পানি সচিব চৌধুরী এহসানুল হক। সাঈদ খোকন কোনো নির্বাচন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চাচা মো. ইসমাইল নওয়াবকে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে কোনো কমিটি গঠনও করা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতার কারণে যা করা হয়েছে, তা হয়েছে শুধু কাগজে-কলমে এবং চেয়ারম্যান সাঈদ খোকনের নির্দেশনায়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সভার বাধ্যবাধকতা থাকায় সাঈদ খোকন স্ত্রী, বোন, শ্যালিকা, ভগ্নিপতি, দুই নাবালিকা মেয়ে ও নিকটাত্মীয়দের পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এরপর নিজেরা সভা করে রেজ্যুলেশন বা কার্যবিবরণী তৈরি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পাঠিয়েছেন।

পাবলিক শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে পরিচালক নির্বাচন না করে এভাবেই সাঈদ খোকন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজের বোন, মেয়ে এবং নিকটাত্মীয়কে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বানিয়েছেন। তার বোন ও মেয়ে ২০১০ সাল থেকে পাবলিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসাবে রয়েছেন। পর্ষদের দুই স্বতন্ত্র পরিচালক জাবেদ আহমেদ চেয়ারম্যানের আপন ভগ্নিপতি এবং ইমরান আহমেদ ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলে। আবার স্বতন্ত্র পরিচালক জাবেদ আহমেদ ও পাবলিক শেয়ারহোল্ডার পরিচালক সাহানা হানিফ (চেয়ারম্যানের বোন) সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।

সাঈদ খোকন তার ভগ্নিপতি ও ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলেকে স্বতন্ত্র পরিচালক বানিয়েছেন। এর পাশাপাাশি তাদের অডিট কমিটি ও এনআরসি কমিটিরও চেয়ারম্যান বানিয়েছেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক জাবেদ আহমেদ ৭ বছর এবং ইমরান আহমেদ ৫ বছর ধরে কোম্পানিতে আছেন। ৬ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০২২ সালে জাবেদ আহমেদের স্থলে হুমায়ূন কবিরকে (সম্পর্কে সাইদ খোকনের চাচা) নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে কাগজপত্রে দেখানো হলেও পূর্বের স্বতন্ত্র পরিচালক জাবেদ আহমেদ এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, ডিএসসিসির মেয়র থাকাকালীনও নিয়মবহির্ভূতভাবে কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন সাঈদ খোকন এবং যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। দেশের বাহিরে বা সভায় অনুপস্থিত থেকেও তিনি সভার ফি গ্রহণ করেছেন। শুধু সাঈদ খোকনই নন, তার স্ত্রী, মেয়ে, শ্যালিকা ও বোনও দেশের বাইরে বা সভায় অনুপস্থিত থেকে সভার ফি গ্রহণ করেছেন।

এছাড়া কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের জন্য কেনা ৬৫/২/২, পুরানা পল্টনে ১৯৯৬ বর্গফুট এবং ১,১/১ নয়াপল্টনে ৫৭৮০ বর্গফুটের স্পেস বিক্রি করে বেশি ভাড়ায় বনানীতে নিজের মালিকানাধীন ভবনে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে সাঈদ খোকন এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন।

সাঈদ খোকনের একক সিদ্ধান্তেই কোম্পানির বর্তমান সিইও মো. আব্দুল খালেক মিয়া, সিএফও মো. মঈনুল আহছান চৌধুরী এবং কোম্পানি সচিব চৌধুরী এহসানুল হক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম