নগরকান্দা রণক্ষেত্র : আহত অর্ধশতাধিক
বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১
ফরিদপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরের নগরকান্দায় কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের আগমনকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কবির ভূঁইয়া (৫৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল নিজ নির্বাচনি এলাকা ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দা-সালথায় শোডাউন ও পথসভার আয়োজন করেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রাতে শহিদুল ইসলাম বাবুলের কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সমর্থকরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই দুগ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বুধবার সকালে বাবুলের কয়েকশ সমর্থক নগরকান্দার প্রবেশদ্বার ছাগলদি এলাকার পেট্রোল পাম্পের পাশে অবস্থান নেন। অপরদিকে বাবুলকে প্রতিরোধ করতে শামা ওবায়েদের নেতাকর্মীরা জুঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে পালটাপালটি স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শামা ওবায়েদ গ্রুপের লোকজন বাবুলের সমর্থকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় বাবুলের সমর্থক কবির ভূঁইয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়।
এরপরই উভয়গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ছাগলদি, জঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে উভয়গ্রুপের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। তাদের নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে নগরকান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অপরদিকে দুপুর ১টার দিকে ঢাকা থেকে সড়কপথে নগরকান্দায় আসার পথে শহিদুল ইসলাম বাবুলের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া নামক স্থানে এ হামলায় বহরের বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় কয়েকজনকে। দুপুর দেড়টার দিকে শহিদুল ইসলাম বাবুল তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তালমা মোড় এলাকায় পথসভা করেন। পরে সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের দেখতে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে যান। এ ঘটনার জন্য তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দায়ী করেন। বাবুল বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে একজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা ও অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আহত করা হয়েছে। শামা ওবায়েদের ইন্ধনে তার কর্মী-সমর্থকরা এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে শামা ওবায়েদ বলেন, বর্তমান সময় উৎসবের নয়। এ সময় গেট বানিয়ে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্যাতন-নিষ্পেষণের শিকার হয়েছেন, নগরকান্দার বিভিন্ন গ্রামের লোকজন, তারা এ বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। এ কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আমি অবশ্যই দেখব। তবে আমাদের দলের নির্দেশ আছে, বহিরাগত কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা যেন এসব না করি।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) আসাদুজ্জামান সাকিল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
শামা ও বাবুলের পদ স্থগিত : এ ঘটনার পরপরই দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে শামা ওবায়েদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।