চট্টগ্রামে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ
পার্শ্ববর্তী দেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
১৬ বছরে যারা একটি কথাও বলেনি, ১৬ দিনেই তারা সব সমস্যার সমাধান চায়-সারজিস * বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সংকটের মধ্যে ফেলা হয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমরা দেখেছি ফেনীতে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেখেন, আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে রয়েছি। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ আমাদের সহায়তা করার কথা, সেখানে তারা নানাভাবে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা যে ব্যারিকেডটি খুলে দিয়ে বাংলাদেশে পানি প্রবেশ করতে দিলেন, অন্যদিকে দেখেছি তিস্তাতে পানি সংকটে সেখানে চাষাবাদ করা যায় না। আমাদের যখন পানির প্রয়োজন আপনারা তখন পানি দিচ্ছেন না। আর যখন পানির প্রয়োজন নেই আপনারা বেড়িবাঁধগুলো খুলে দিয়ে বন্যায় বাংলাদেশের মানুষকে সংকটের মধ্যে ফেলেন। সুতরাং যারা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সংস্কারকে বাধা দিতে চায় তাদের আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে চিহ্নিত করতে চাই। দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান বন্যা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ান। একটি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সব সিদ্ধান্ত একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ১৬ বছরে যারা একটি কথাও বলার সাহস করেনি, তারাই চায় ১৬ দিনে সব সমস্যার সমাধান হোক।
বুধবার ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে যান কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এ সময় দুই সমন্বয়ক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় জন্মে আপনারা যদি আমাদের যথাযথ রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সময় না দিয়ে গত ১৬ বছরের ব্যর্থতার দায় ভার আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনারা আমাদের এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল করেন, আমরা মনে করব, রাষ্ট্র পুনর্গঠনে আমাদের সহায়তা না করে বরং ষড়যন্ত্র করছেন। আপনারা ব্যক্তি পর্যায় থেকে, গোষ্ঠী পর্যায় থেকে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব কর্তৃপক্ষকে আমরা আহ্বান জানাব, রাষ্ট্র সংস্কারে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিন। সময় দেওয়ার পরে আপনাদের যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলো অ্যাকাডেমিক অ্যাপ্রোচ করেন। আমরা সেগুলো নিয়ে নিজেরা কথা বলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতির আখড়া হিসাবে পরিচিত ভূমি অফিস, বিআরটিএ, ওয়াসাসহ এ জাতীয় কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করার আগে আহ্বান করছি এখনো সময় রয়েছে আপনারা লাইনে ফিরে আসুন। আপনারা জনকল্যাণের জন্য কাজ করুন। আপনারা যদি এই দুর্নীতির শৃঙ্খল আরও বৃদ্ধি করেন, তাহলে বঙ্গভবনের মতো, সংসদ ভবনের মতো পরিণতির জন্য প্রস্তুত হন। কাস্টমসে যারা রয়েছেন, আমরা মনে করি, ঘুস খেয়ে কখনো রাষ্ট্র সংস্কার করা যায় না। আপনারা রাষ্ট্র সংস্কারে সহযোগী হন। কোনো সরকারি অফিসে কেউ যদি ঘুস চায়, তাকে ঘুসি মারুন। নয় তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন।’
হাসনাত বলেন, ‘ঘুস-অনিয়মের জন্য সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বিগত সরকারের আমলে শাস্তি হতো তিরস্কার কিংবা ওএসডি। এগুলো কোনো শাস্তি নয়। আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবে। পদচ্যুত করা হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান যে আইনি কাঠামো রয়েছে, সেখানে সেই ব্যবস্থা করবে। যা করা প্রয়োজন তা করে ঘুসের যে বাণিজ্য রয়েছে, দুর্নীতির যে আখড়া রয়েছে সেটিকে ছাত্র-নাগরিক সমূলে উৎপাটন করবে।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্য কমে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন দেখছি একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আন্ডারে আবার সেই সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। আমরা এই সিন্ডিকেটকে সতর্ক করে দিতে চাই, আপনারা যদি জনমুখী কোনো সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিন্ডিকেট কিংবা মাফিয়াতন্ত্র তৈরি করে বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো অসন্তুষ্টি তৈরি করেন তাহলে ছাত্র-জনতা যেভাবে শেখ হাসিনাকে গদি থেকে নামিয়েছিল, ঠিক একইভাবে সিন্ডিকেটগুলো সমূলে উৎপাটন করা হবে।’
এ সময় সমন্বয়ক সরাজিস আলম বলেন, ‘বিগতে ১৬ বছর ধরে যে মানুষরা একটি কথা বলারও সাহস করেনি। বিগত ৫৩ বছরে যারা রাস্তায় নামার সাহস করেনি। সেই তারা চান একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৬ দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাক। এই মানুষগুলো তাদের ব্যক্তিগত কিংবা ছোট্ট একটি গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রাজপথে নামছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করছে। আমরা মনে করি, এতবড় ক্ষতপূর্ণ রাষ্ট্রের সংশোধনের জন্য যে সময় প্রয়োজন। সেই সময়টুকু না দিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে এই ব্লকেডগুলো বিভিন্ন জায়গায় করে, রাষ্ট্রের স্থীতিশীল অবস্থা হওয়ার জন্য যে ফ্লো দরকার তাতে বাধা দিচ্ছে এবং তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছি। কোনো সিঙ্গেল বৈষম্য নয়, পুরো বাংলাদেশের সব সেক্টরের সব বৈষম্য। রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল অবস্থায় আসার জন্য কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাসের সময় দিতে হবে।’