বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে হত্যা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় ৩ মামলা
তিন মামলাতেই আসামি সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের আহমেদ আকবর সোবহান ও সায়েম সোবহান আনভীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (শাহ আলম), তার ছেলে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা হিসাবে ২৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীর বাড্ডা থানায় পৃথকভাবে এসব মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বজনরা।
বাড্ডা থানা পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ৩ জনের পরিবার বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা করেছেন। তিনটি মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। অন্য আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা-১১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ-সদস্য হেদায়ত উল্লাহ রণ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবুসহ আরও অনেকে। তবে তিনটি মামলাতেই সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।
সুমন হত্যায় মায়ের মামলা : মামলাগুলোর এজাহার বিশ্লেষণে দেখা যায়, একটি মামলার বাদী নিহত সুমন সিকদারের মা মোছা. মাছুমা। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দায়ের হওয়া এ মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে তার ছেলে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। প্রগতি সরণির উত্তর বাড্ডা অংশে ফুজি টাওয়ারের উত্তর পাশের রাস্তার ওপর পৌঁছা মাত্রই আসামিদের নির্দেশে ও তাদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করে আমার ছেলে মো. সুমন সিকদারকে হত্যা করে। আসামিদের ছোড়া গুলি আমার ছেলের বুকের পাঁজর ভেদ করে চলে যায়। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার ছেলেকে মৃত অবস্থায় শনাক্ত করি। উক্ত স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছে জানতে পারি ১৭৯ আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিরা তাদের অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। এ মামলাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।
হাফিজুল হত্যায় বাবার মামলা : গত ২০ জুলাই বিকালে মেরুল বাড্ডায় গুলিতে রিকশা চালক হাফিজুল শিকদার নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বাবা আবুবকর শিকদার একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বুধবার দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই বিকালে তার ছেলে রিকাশায় যাত্রী নিয়ে মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টের ৪নং রোডের পশ্চিম মাথায় প্রগতি সরণিতে যাওয়া মাত্রই আসামিদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে বাদীর ছেলে মো. হাফিজুল শিকদার (২৮) নিহত হন। আসামিদের ছোড়া গুলি ছেলের ঘাড়ের কাছ দিয়ে ঢুকে ডান হাতের বগল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেকে মৃত অবস্থায় শনাক্ত করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে জানতে পারেন বসুন্ধরা গ্রুপের শাহ আলম, তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরসহ ১৭৯ জন আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিরা অবৈধ অস্ত্র দ্বারা হাফিজুলকে গুলি করে হত্যা করে।
সোহাগ হত্যায় ভাইয়ের মামলা : ৫ আগস্ট সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে গুলশান লিংকরোডে এলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সোহাগ মিয়া। এ ঘটনায় তার বড় ভাই বিল্লাল মিয়া বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে ১৭৮ জননের নাম উল্লেখ করে এবং ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। বুধবার দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, ছাত্র-জনতার সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের দিন সকালে তার ভাই বাড্ডা গুলশান লিংকরোডে পৌঁছা মাত্রই আসামিদের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি গুলি করে ছোট ভাই সোহাগ মিয়াকে হত্যা করে। আসামিদের গুলি আমার ভাইয়ের বুক ভেদ করে বেরিয়ে যায়। আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার ভাইকে মৃত অবস্থায় শনাক্ত করি। উক্ত সময়ে উক্ত স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে জানতে পারি ১৭৮ জন আসামিসহ অজ্ঞাত আসামিরা তাদের অবৈধ অস্ত্র দিয়ে বাদীর ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে আত্মীয়স্বজনের কাছে পরামর্শ করে এবং বেশ কিছুদিন থানায় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা দায়ের বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ মামলাতেও সালমান এফ রহমান, বসুন্ধরার আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে।