গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য
নির্বাহী আদেশে নির্ধারণের ক্ষমতা বাতিল হচ্ছে
আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০০৩-এর ৩৪ক ধারা বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। আইনের উল্লিখিত ধারার ক্ষমতাবলে সরকার নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ করতে পারত। দীর্ঘকাল ধরে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করে আসছে। কিন্তু এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সেই ক্ষমতা খর্ব করে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকার নির্বাহী আদেশে মূল্য নির্ধারণের জন্য ৩৪ক ধারা সংযোজন করে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩-এর ৩৪ক ধারা বাতিলের প্রস্তাব কার্যতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
আইনের বিতর্কিত ধারাটি বাতিলের জন্য প্রস্তুত খসড়ায় বলা হয়েছে, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। সরকারের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করল। এই অধ্যাদেশে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ নামে অভিহিত হবে। ২০০৩ সালের এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৩৪ ধারা বিলুপ্ত হবে।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি উল্লিখিত আইনে বিতর্কিত ৩৪ক ধারা সংযোজন করে জারি করা গেজেটে বলা হয়, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, গেজেট প্রজ্ঞাপনে ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালি কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহণ ও বিপণনের জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিতরণ, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণ ও পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।
ওই গেজেটে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আদেশ ২০২২ এতদ্বারা রহিত করা হল। রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিত অধ্যাদেশ দ্বারা সংশোধিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর অধীনে কৃত কোনো কাজ বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা এই আইন দ্বারা সংশোধিত উক্ত আইনের অধীন কৃত বা গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি (সংশোধন) আইন, ২০২২-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরের মাসে জাতীয় সংসদে এ আইন পাশ হয়। আইন সংশোধনের আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বিইআরসি ৯০ দিন সময় নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে নির্ধারণ করত। সংশোধনের পর সরকার নির্বাহী আদেশে যে কোনো সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা পায়।
সর্বশেষ গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের নতুন দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে ২০২৩ সালে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা। ওই বছরের ১২ ও ৩১ জানুয়ারি এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় মোট ১৫ শতাংশ। নির্বাহী আদেশ ছাড়া গত দেড় দশকে এ নিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার এবং খুচরায় ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন,বারবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যা দুর্ভোগ আরও বাড়াবে। আমরা বাধ্য না হলে মূল্যবৃদ্ধি করব না। প্রয়োজন হলে কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলে তার নীতিমালা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেবে। উপদেষ্টা আরও বলেন, আগের সরকারের সবকিছু বাতিল করতে হবে এমন নয়। সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা হবে। যেসব কাজ ভালো তা বহাল থাকবে। যেসব প্রকল্প অপ্রয়োজনীয় সেগুলো বাদ যাবে। এছাড়া বৈঠকে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইন্সটিটিউট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৪ এর খসড়া নীতিগতও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।