সংসারে সচ্ছলতা আনতে ঢাকায় গিয়ে লাশ হলো সাগর
মো. সাইফুল ইসলাম, আগৈলঝাড়া
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একটি বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী বাবার সামান্য বেতনে ছয়জনের সংসার টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলছিল। এজন্য ছেলে সাগর হাওলাদার (১৬) সংসারে সচ্ছলতা আনতে দেড় মাস আগে ঢাকায় যায়। ৩২নং ধানমন্ডির লেকপাড়ে চায়ের টং দোকানে ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ২৩ জুলাই সন্ধ্যার পর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ২৭ জুলাই রাতে।
সাগর বরিশালের আগৈলঝাড়ার বাগধা গ্রামের মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে। ঘটনার দিন স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ ও অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়নি। ২৬ জুলাই সাগরের জ্ঞান ফিরে এলে নার্সরা তার পরিচয় জেনে লোকের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়িতে খবর দেন। এরই মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন থাকায় পরিবারের লোকজনের ঢাকায় যেতে দেরি হয়। ২৭ জুলাই সাগরের দরিদ্র বাবা নুরুল হক হাওলাদার ও মা আম্বিয়া বেগম ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে যান। সেখানে সাগরের গুলিবিদ্ধ পায়ে পচন ধরা এবং মুমূর্ষু অবস্থায় সাগরকে দেখতে পেয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা একটি পায়ে অপারেশন ও অন্য পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন। ওই দিন দুপুরে অপারেশনসহ একটি পা কেটে ফেলা হয়। ২৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে সাগর মারা যায়। ২৮ জুলাই দুপুরে গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে এলে বৃদ্ধ দাদা মজিদ হাওলাদার (৮০), দাদি রহিমা বেগম (৬৫), ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র বোন মরিয়ম খানম (১২) ও মা-বাবাসহ এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সাগরের লাশ নিজ বাড়ির পাশে দাফন করা হয়।
সাগরের বাবা নুরুল হক বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিত তাহলে হয়তো সাগর বেঁচে যেত। তাকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব?
উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু ভাট্টি বলেন, সাগরের পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।