রাজশাহী সিটি কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ
ছাত্রদল নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত নারী অধ্যক্ষ, পদত্যাগ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কারণে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা তাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন। পরে চাপের মুখে পদত্যাগ করেন এই নারী অধ্যক্ষ। যদিও ছাত্রদল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এ সময় তারা অধ্যক্ষকে পদত্যাগে চাপ দিচ্ছেন। পরে একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে আনা হলে অধ্যক্ষ তাতে স্বাক্ষর করেন। কথা বলতে আমিনা অবেদীনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে আমিনা আবেদীন মঙ্গলবার ফেসবুকে তিনটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এটিতে তিনি লেখেন, ‘আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে।’ আরেকটিতে লেখা হয়, ‘আমাকে ও আমার ছেলের ওপর শারীরিকভাবে হামলা করেছে ছাত্রদল।’ অন্য স্ট্যাটাসে অধ্যক্ষ লেখেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাতে আমার জীবন হুমকির মুখে।’
আমিনা আবেদীনের ছেলে নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন। তার মাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন। তিনি লিখেছেন, ‘আজকে রাজশাহীর প্রধান একটা কলেজের অধ্যক্ষের গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। জোর করে তাকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদীন এবং তার সন্তান অর্কর গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদল। এই অর্ককে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতেই আমরা মতিহার থানায় ১০ ঘণ্টা বসেছিলাম (আন্দোলনের সময় আটক হন)।’
তিনি লেখেন, ‘ছাত্রদল কি পুরোনো জমানার খাসলত থেকে বের হবে না? ছাত্রলীগের জুলুমের পথেই চলবে তারা? আর বাংলাদেশ তা মেনে নেবে? আশা করি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা বিএনপি নেতারা এর একটি বিহিত করবেন।’
মাহবুব টুংকু নামের আরেক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমিনা আবেদিন, যাকে আমি তার ছাত্রজীবন থেকে জানি। কখনো কোনো দিন দেখিনি কোনো দলের পারপাস সার্ভ করতে। তার দুটি সন্তান রাজশাহীর যেকোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে সাবার আগে হাজির হয়েছে। এবারের এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সম্মুখসারিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাকে আজ জোরপূর্বক অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমিসহ ৮০% হতাশ, ১০০% সংক্ষুব্ধ। বিএনপি-জামায়াতের সেই রাজনীতির নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।’
জানতে চাইলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরে গিয়েছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঝামেলা হচ্ছিল। সেখানে অধ্যক্ষের ছেলে আসেন। এটা নিয়েই ঝামেলাটা হয়।’