১৫ আগস্ট নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ বিএনপির
তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি। একই সঙ্গে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন যুব, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্রদলও জেলা-মহানগর, থানা-উপজেলা ও পৌর ইউনিটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে।
এসব কর্মসূচিতে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থককে অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে কাল ১৫ আগস্ট ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে-এমন আশঙ্কা করছে বিএনপি। এজন্য ওইদিন ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। রাজধানীসহ সব মহানগর ও জেলা সদরের পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবে নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিএনপি নেতারা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন। ছাত্র-জনতার পছন্দে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। তারা দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ করতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে কর্মসূচির নামে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একটি দায়িত্বশীল দল হিসাবে বিএনপি ঘরে বসে থাকতে পারে না। যে কোনো রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করার অধিকার আছে। কিন্তু শান্তির নামে অশান্তির সৃষ্টি করলে তা জনগণের স্বার্থে প্রতিহত করা হবে।
যদিও বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশপ্রেমিক চৌকশ সেনা কর্মকর্তাদের বর্বরোচিত হত্যা, হেফাজতের আলেমদের ওপর সংঘটিত নিষ্ঠুরতম গণহত্যা, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীকে নির্মমভাবে হত্যার বিচারের দাবিতে’ কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লড়াই করা ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি ও সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গুম-খুন-হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে শত শত প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সরাসরি নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচারের দাবিও চাওয়া হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা এবং শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের’ বিচারের দাবিতে আজ বুধবার ও কাল বৃহস্পতিবার দুদিন সারা দেশে দলের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এছাড়া ১৬ আগস্ট দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে।
এদিকে যুব, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল সারা দেশে আজ ও আগামীকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে। ১৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরের একটি স্থানে অবস্থান নেবে ছাত্রদল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ছাত্র-জনতার পছন্দে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। ফলে তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। ছাত্ররা প্রমাণ করেছে কোনো স্বৈরাচারী সরকার নির্যাতন করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তাদের এ সাফল্য বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে জাতীয় নির্বাচনের মতো ষড়যন্ত্র চলছে। জাগ্রত ছাত্র-জনতা সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মারা এখন বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিরাজমান, তারা যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের এ যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করব। প্রতিটি ওয়ার্ডের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেবে নেতাকর্মীরা। যাতে আওয়ামী সন্ত্রাসী আবারও মাথা চাড়া দিতে না পারে। বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের কোনো স্থান নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, দুদিন রাজপথে অবস্থান জানান দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি সফলে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন। মঙ্গলবারও নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশে সব জেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ওই সভায় কর্মসূচি সফলে নানা দিকনির্দেশনা দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা নতুন করে পেয়েছি, তা নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহায়তায় ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেই ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয় সেজন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেভাবে মাঠে থাকবে, তাদের সঙ্গে ছাত্রদলও পাশাপাশি থেকে রাজপথে অবস্থান নিতে পারে এবং সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই বিজয়কে সুসংহত করতে পারে সেভাবে দিকনির্দেশনা আমরা দিচ্ছি। যাতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে অবস্থান করতে পারে।