১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের প্রস্তাব মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়। মঙ্গলবার রাতে ছুটি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যেহেতু ১৫ আগস্টের ছুটি থাকছে না। তাই জাতীয় শোক দিবসও বাতিল হয়ে গেছে। সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। 

বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চ, সিপিবি, বাসদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, এবি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালন করা হবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনায় ভিন্ন ভিন্ন মত আসে। কোনো কোনো দল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিল করার কথা বলেছে। আবার জাতীয় শোক দিবস বাতিল না করার পক্ষেও মত আসে। এ বিষয়ে দলগুলোর মতামত জানতে চাইলে একমাত্র বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের পক্ষে মত দেন। 

তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্ট সর্বজনীন। যতটুকু শ্রদ্ধা পাওয়া উচিত, ততটুকু শ্রদ্ধাই যেন পায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৫ আগস্ট উপলক্ষ্যে ঘোষিত ছুটি বাতিল করা হলো। বৈঠকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আত্মোৎসর্গকারী শহিদদের উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত পদে থাকতে পারবেন এই নিয়মও পরিবর্তন করা হয়।

এর বাইরে ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা এবং শহিদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই কমিটি ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা এবং শহিদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শহিদ এবং আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করবে। 

এদিকে গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন। সাক্ষাৎ শেষে সানজিদা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা তাদের সুষ্ঠু বিচারের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন বলেও তিনি জানান।