Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য চাইবে জাতীয় পার্টি

শেখ মামুনুর রশীদ

শেখ মামুনুর রশীদ

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য চাইবে জাতীয় পার্টি

নির্বাচনব্যবস্থার সঠিক কাঠামো তৈরিসহ সামগ্রিকভাবে দেশকে নিয়মের মধ্যে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যতদিন সময় লাগে, তাদের সেই সময় দিতে চায় জাতীয় পার্টি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এজন্য দলটি একগুচ্ছ প্রস্তাবনাও রাখতে চায়। তবে এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কী চান-তা দেখবেন জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রয়েছেন তিনি। এই পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে পতন হয় তার নেতৃত্বাধীন সরকারেরও। বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সেই সরকারের প্রধান হিসাবে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনিও এতে সম্মতি দিয়েছেন। আজ-কালের মধ্যে এই সরকার গঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা শপথ গ্রহণ শেষে তাদের কার্যক্রম শুরু করলে দলটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা, বর্তমান নির্বাচনিব্যবস্থার আমূল সংস্কার, সংসদে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বের বিধান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিচার, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন এবং শক্তিশালী করাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব রয়েছে জাতীয় পার্টির।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা মনে করি নির্বাচনব্যবস্থার সঠিক কাঠামো তৈরি, দুর্নীতিবাজদের বিচারসহ সামগ্রিকভাবে দেশকে নিয়মের মধ্যে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যতদিন সময় লাগে, তাদের সেই সময় দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, এখন তো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুবই খারাপ অবস্থা। দেশে কোনো সরকার নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। সুতরাং প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বর্তমান ব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এই ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। স্থায়ীভাবে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করতে হবে। এতে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা শপথ নেওয়ার পর তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। এরপরই তাদের সঙ্গে আমরা বসব, আমাদের মতামত চাইলে সেখানে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরব। তিনি বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থার নামে বর্তমানে দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। সব ক্ষমতা এক ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর হাতে। এ অবস্থার অবসান না ঘটালে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হবে না। তাই আমরা চাই সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য। এছাড়া একজন ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না-এমন বিধানও যুক্ত করতে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বাধীন এবং শক্তিশালী করার দাবি আমাদের। এছাড়া দুর্নীতিবাজদের বিচার করা, আন্দোলনের সময় যাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, তদন্ত কমিশন গঠন করে এগুলো তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়াসহ আরও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির শীর্ষনেতারা কয়েক দফা বৈঠক করেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বঙ্গভবনেও যান দলটির তিন শীর্ষ নেতা। সেখানে তারা দেশে যে কোনো মূল্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার তাগিদ দেন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে মনোনীত হওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তার সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব করায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদেরও ধন্যবাদ জানান জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম